সম্মানিত শিক্ষার্থী বন্ধুরা আপনি কি পারিবারিক বাজেট কাকে বলে তা জানতে চাচ্ছেন? আজকে আমরা শিক্ষনীয় ক্যটাগরি থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টপিক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। বর্তমান সময়ে প্রতিটা পরিবারেই একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকাটা জরুরী। আপনাদের অনেকে পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন যারা প্রতি মাসের পরিবারিক বাজেট তৈরি করতে চায় কিন্তু কিভাবে একটি সুস্পষ্ট পরিবারিক বাজেট তৈরি করবেন সেই সম্পর্কে হয়তো অবগত নন।
মূলত সেসব পরিবারের কথা চিন্তা ভাবনা করেই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে এবং আপনার পরিবারের জন্য পারিবারিক বাজেট কিভাবে তৈরি করবেন সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তো আপনি যদি সেসব পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে পারিবারিক বাজেট কাকে বলে ও পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নিন।
উপস্থাপনা – পারিবারিক বাজেট
আমরা সকলেই জানি যে একটি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে পরিবার। প্রতিটি পরিবারে ইনকাম ও খরচ দুটিই ঘটে। তবে আপনার পরিবারে যদি সঠিক বাজেটে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আর্থিক সংকটে পড়তে হতে পারে। পরিবারের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম জেনে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরী।
শিক্ষার্থীবন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পারিবারিক বাজেট কাকে বলে ও পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে। আপনাদের পরিবারে যদি পারিবারিক বাজেট নিয়ে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেল টি অনেক সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
এবং এর পাশাপাশি আপনার অন্যান্য পরিবারের সদস্যদেরও এ বিষয়ে জানাতে পারবেন। তাই আমার মনে হয় এই বিষয়ে অবহেলা না করাই উচিত। এই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে এগুলো বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে প্রথমে আমরা পারিবারিক বাজেট কাকে বলে সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
পারিবারিক বাজেট কাকে বলে – paribarik bajet kake bole
আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাটা সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে আমরা যখন একটি পরিবার অনেকগুলো সদস্য নিয়ে গঠিত হয় ঠিক সে সময়ে পরিবারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট পারিবারিক বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পারিবারিক বাজেট বলতে একটি পরিবারের আয় অনুযায়ী অনেকগুলো সদ্স্যের চাহিদা পূরণ করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় আয়ের বিভিন্ন খাতের বিষয়ে উল্লেখ থাকে এবং এর পাশাপাশি পরিকল্পিত ব্যয়ের বিভিন্ন খাত নিয়েও উল্লেখ থাকে।
তবে আমি যদি আরও সহজ ভাষায় বলি তাহলে পারিবারিক বাজেট বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পরিবারের আয় অনুযায়ী ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়। এরূপ একটি পরিকল্পনাকে বোঝানো হয়। একটি নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করে এবং সেই বাজেট পর্যবেক্ষণ করার ফলে একটি পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা খুব সহজেই বজায় রাখা সম্ভব।
বাজেট তৈরি করে ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলাও সম্ভব।
আশা করছি এই অংশটুকু পড়ে আপনারা পারিবারিক বাজেট কাকে বলে সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তবে একটি পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে হলে বাজেট তৈরি করার নিয়ম জেনে নিতে হবে। তাহলে এবার আসুন পরিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো।
পরিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম
একটি পরিবার কে সুষ্ঠভাবে পুরিচালনা বা নিয়ন্ত্রন করতে প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট পারিবারিক বাজেট। আর এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার পরিবারের জন্য পারিবারিক বাজেট তৈরি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আপনার পরিবারে যদি আয়ের তুলনায় ব্যায় এর পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তাহলে পারিবারিক ক্ষতির সম্মূখিন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কোনো এক নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয় করার আর্থিক পরিকল্পনাকে পারিবারিক বাজেট বলা হয়।
আরো পড়ুন 👇
একটি পরিবারে পারিবারিক বাজেট তৈরি হয় আয়ের পরিমানের উপর নির্ভর করে। পারিবারিক বাজেট তৈরি করার প্রথম দিক দিক হচ্ছে আয়ের পরিমানের কিছু অংশ সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করা। আর পারিবারিক বাজেট হতে পারে ৭ দিন বা ৩০ দিন অথবা ১২ মাসের যেটাই বলুন না কেন উক্ত সময়ের আয়ের ও ব্যায় এর হিসাব এর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা কে পারিবারিক বাজেট বলে।
আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে কিছু বিষয় বা কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো দিক নিম্নে তুলে হলো –
১. প্রয়োজনীয় দ্রব্য লিষ্ট করা
আপনি যেই সময়ের জন্য আপনার পরিবারের জন্য পারিবারিক বাজেট তৈরি করবেন সেই সময়ে কি কি দ্রব্য প্রয়োজন হবে সেগুলো একটি লিষ্ট তৈরি করে নিতে হবে। তালিকা থেকে প্রথমে প্রধান দ্রব্য গুলো কে আলাদা করে নিতে হবে। মোট কথা যেই পন্যটি বাধ্যতামূলক।
২. দ্রব্য মূল্য লিষ্ট করা
বর্তমান দ্রব্য তালিকা মোতাবেক প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য আলাদাভাবে উল্লেখ করে লিখতে হবে।
৩. সম্ভাব্য আয় নিশ্চিত করা
যে সময়ের জন্য বাজেট তৈরি করা হবে উক্ত সময়ের মধ্যে পারিবারিক কত টাকা আয় হতে পারে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। তবে কখনোই সম্ভাব্য আয়ের চেয়ে অতিরিক্ত আয় ধরা যাবে না।
৪. আয় অনুযায়ী ব্যায়ের সমতা
পারিবারিক আয়ের পরিমান অনুযায়ী ব্যায়ের পরিমান নির্ধারণ করতে হবে। বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করা যাবে না।
৫. সঞ্চয় করা
প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ভবিষ্যতে কি হবে বা কি হতে পারে এটা কিন্তু আমরা কেউই জানি না। তাই ব্যয় এর পরিমান বেশি হলেও সেই ব্যয় থেকে কিছু অংশ সঞ্চয় করে রাখতে হবে।
৬. পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট
পারিবারিক বাজেট এমন ভাবে করতে হবে যেন সেটা বাস্তব সম্মত হয়। পরিবারে প্রয়োজন ও মিটে যায় আর হঠাত করে যদি কোনো খাতে বাজেট এর পরিমান বৃদ্ধি পায় তাহলে অন্য বাজেট কমিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া যায়।
পারিবারিক বাজেটের নমুনা
পরিকল্পনার সংখ্যাত্বক প্রকাশ করাকেই বাজেট বলা হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করার উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আয় ও ব্যয়ের পূর্ব পরিকল্পনার প্রকাশ করাই হল বাজেট। এখানে নির্দিষ্ট সময় বলতে কোনো ধরনের জরজবস্তি বা ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আবার পরিবারকেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকেও পারিবারিক বাজেট বলা হয়।
বাজেট প্রণয়ন করার মাধ্যমে পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে রাখা হয়, যাতে করে আয়ের তুলনায় খরচের বেশি হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে। নির্দিষ্ট বাজেটের মাধ্যমে পারিবারিক হিসাব-নিকাশ পরিচালনা করলে, অবশ্যই নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যেই সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব।
পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর একটি সার্থক বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে। একটি পরিবারের আয়, গঠন, আকৃতি, সকল সদস্যের রুচিবোধ, সামাজিকতার পরিচিতি ইত্যাদিসহ আরও অন্যান্য দিকগুলো সক্রিয়ভাবে বাজেট প্রণয়নের সময় বিবেচনা করে নিতে হয়। তবে প্রতিটি পরিবারের বাজেট একরকম তৈরি করা সম্ভব হবে না।
মোট কথা হলো একটি পারিবারিক বাজেট তৈরি করা হয় আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য থেকেই। খরচের বণ্টন নির্ভর করবে একটি পারিবারিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে। যেমন- খাদ্য খাতে শতকরা ২২% থেকে ২৭%, বস্ত্রখাতে ৭% থেকে ১৩%, বাসস্থান খাতে ৩৫% থেকে ৪৫%, শিক্ষাখাতে ১৫% থেকে ২০%, এবং যানবাহন খাতে ১২% থেকে ১৮% খরচ করা যেতে পারে ( এটা আনুমানিক হিসাব)।
আপনার পরিবারের ক্ষেত্রে চাইলে কম বেশি করে করতে পারেন। সেটা আপয়ার ইনকাম ও খরচের উপর নির্ভর করবে। আশা করছি এই অংশটুকু পড়ে আপনারা এতক্ষণে পরিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এবার আসুন নিচের অংশ থেকে আমরা পারিবারিক বাজেটের সুবিধা কি কি সেই সম্পর্কে জেনে নিব।
পারিবারিক বাজেটের সুবিধা কি কি
আপনাদের হয়তো জানা নেই পারিবারিক বাজেটের সুবিধা কি? এজন্য অনেকেই গুগলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা মাথাই রেখে পোষ্টের এই পাঠে পারিবারিক বাজেটের সুবিধাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনার পরিবারকে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পারিবারিক বাজেট পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একটি পরিবারকে শুধুমাত্র পারিবারিক বাজেট তৈরি করার মাধ্যমে আর্থকভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাগুলোর সাথে মোকেবেলা করা যায়। এটি একটি পরিবারে আর্থিক সংকট দূর করতে অনেক সহায়তা করে থাকে। পরিবারের সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পারিবারিক বাজেট নির্ধারণ করাটা খুবই জরুরী।
এছাড়াও পারিবারিক বাজেট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আয় অনুযায়ী ব্যয় ও দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। এজন্য পারিবারিক বাজেট পরিকল্পনা ব্যতিত পরিবার সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করাটা সহজতর হবে না। কেননা সমাজের মূল অংশই হচ্ছে পরিবার। সুখি পরিবার গঠন করতে হলে পারিবারিক বাজেট আমাদের সকলের পরিবার পরিচালনা করতে অনেক সাহায্য করে।
আপনি যদি আপনার জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সুচিন্তিত পরিকল্পনা করতে হবে এবং এর পাশাপাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের পারিবারিক বাজেট সঠিকভাবে প্রয়োগ করা উচিত তাহলেই আপনার পরিবার সুশৃঙ্খলভাবে জীবনব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারবে।
আর যদি পরিবার স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে কোনো আত্মকর্মসংস্থান মূলক প্রকল্প নিজ ইচ্ছায় নেওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ঐ প্রকল্পের বাজেট তৈরি করা। আশা করছি এই অংশটুকু পড়ে আপনারা এতক্ষণে পারিবারিক বাজেটের সুবিধাগুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে লেখকের মতামত
পরিশেষে বলব যে আপনি যদি আপনার পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় রাখতে চান, তাহলে পারিবারিক পারিবারিক বাজেট তৈরি করাটা অপরিহার্য। এই বিষয়ে আমাদের প্রতিটা পরিবারের সকল সদস্যের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আপনার পরিবারকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি পারিবারিক বাজেট নির্ধারণ করতে হবে।
কেননা পরিবারের মধ্যে বাজেটের চেয়ে খরচ বেশি হয়ে গেলে অনেক সময় পরের মাসে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি আপনাকে ঋণের বোঝা হয়ে থাকতে হতে পারে। এর ফলে আপনার পরিবারের জীবন যাত্রার মান খারাপের দিকে সম্মুক্ষীণ হতে পারে। এজন্য পরিবারের সদস্যের সাথে পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত।
পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে আজকের ব্লগটি উপকারি মনে হলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না আর আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন। আমরা আপনার মতামতের উত্তর দেওয়ার যথাযথভাবে চেষ্টা করবো। এতক্ষন ধরে কাটিং টু ব্লগের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।