সমাজ কি – মানুষ সমাজবদ্ধভাবে জীবন ধারন করে, একসাথে বসবাস করা হচ্ছে প্রতিটা মানুষের ধর্ম। এ কারণে সমাজকে মানুষের একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বলা হয়। সেই প্রাচীণকাল থেকেই মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বসবাস করে আসছে সমাজ গঠন করে। আর তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করতে শুরু করে যাতে নিরাপত্তা ও জীবন ধারণ আরও সহজতর হয়।
মানব সমাজের আদিম রূপে, মানুষ শিকার ও বন্য ফলমূল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। ধাতুর ব্যবহার, কৃষিকাজের উদ্ভাবন, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, কালের পরিক্রমায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজ দিনের পর দিন ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে থাকে।
তো আপনি কি সমাজ কি, সমাজ কত প্রকার ও কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে সমাজ নিয়ে সঠিক বর্ণনা জানতে একদম সঠিক স্থানেই প্রস্থান করেছেন। কেননা আজকের আর্টিকেলে আমরা সমাজ কি, সমাজ কত প্রকার ও কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এর পাশাপাশি সামাজিক উপাদান কয়টি ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব ,সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সহ সমাজ সম্পর্কে আরও প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোকাপাত করবো যারে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনারা নিতে পারেন। তাই এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকলে এই পোষ্টটি শেষ অবদি পড়ুন।
সমাজ কি
সমাজ হচ্ছে মূলত একটি ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক মানুষ একত্রে কিছু বিধি-বিধান, আচার-আচরণ, নিয়ম কানুন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। এছাড়া, একাধিক ব্যক্তি নিজেদের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য যখন একত্রে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মধ্যে থেকে আমরা ২ জন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সমাজবিজ্ঞানী মত অনুযায়ী সমাজের সংজ্ঞা জেনে নিব –
- Gisberg এর মতে, সমাজ বলতে সামাজিক সম্পর্কের একটি বন্ধনকে বোঝায় যার দ্বারা একে অন্যের সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকা যায়।
- Western Mark এর মতে, সমাজ বলতে এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টিকে বোঝায় যা পারস্পরিক একটি সহযোগিতা ও মেলবন্ধন রয়েছে যেখানে সামাজিকতা বজায় রেখে জীবন-যাপন করে।
সমাজ একটি সংস্কৃতিগত ও সামাজিক কাঠামো হিসেবে অবস্থান করে, যা মানুষের আচরণ এবং ক্রিয়া-কলাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
সমাজ কাকে বলে
সমাজ হচ্ছে মূলত একটি মানবজাতির আদি সামাজিক সংগঠন। যেখানে প্রতিটি মানুষ পরম শান্তি ও নিরাপত্তাসহ সব ধরনের আশ্রয় সক্রিয়ভাবে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। সমাজ প্রত্যয়টির ধারণা খুবই ব্যাপক। সহজভাষায় বলা যায়, যখন একাধিক ব্যক্তি বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রে ও সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে।
সমাজ কত প্রকার ও কি কি
সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক বিরাজ করে, সামাজিক নিয়ম রীতিনীতি বিরাজ করে এবং সমাজের নির্দিষ্ট কিছু কাঠামো থাকে। যেগুলোর প্রত্যেকটি জীবনকে ভালোভাবে পরিচালিত করার জন্য সহায়ক।
📌আরো পড়ুন 👇
আর এই সমাজকে সাধারণত একাধিক ভাগে ভাগ করা যায়। এর নির্দিষ্ট কোন প্রকারভেদ নেই। সাধারণত কি কি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে তা জানতে নিচের অংশটুকু পড়ুন। যথা –
- ১. প্রাথমিক সমাজ
- ২. দ্বিতীয়ক সমাজ
- ৩. তাত্ত্বিক সমাজ
- ৪. আর্থসামাজিক সমাজ
- ৫. গ্লোবাল সমাজ
এছাড়াও প্রকৃতি মোতাবেক সমাজকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয় যথাঃ👇
- প্রাকৃতিক সমাজ এবং
- মানবিক সমাজ
অপরদিকে সংগঠন মোতাবকে সমাজকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয় যথাঃ👇
- আনুষ্ঠানিক সমাজ
- অনানুষ্ঠানিক সমাজ
অন্যদিকে, বাস্তব অবস্থান মোতাবেক সমাজকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয় যথাঃ👇
- গ্রামীণ সমাজ এবং
- শহুরে সমাজ
সামাজিক উপাদান কয়টি ও কি কি
নির্দিষ্টভাবে সামাজিক উপাদানের কোন সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে আমার জানা মতে, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি সামাজিক উপাদান রয়েছে যথাঃ–
- পরিবার
- বিদ্যালয়
- খেলার সঙ্গী এবং
- সংঘ
তবে উপরের উল্লিখিত উপাদানের পাশাপাশি সামাজিক উপাদান হিসেবে আরও বেশ কয়েকটি উপাদান রয়েছে যেগুলোকে এই তালিকায় সংযুক্ত করা যায় যেমন আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, অর্থনীতি, সুষ্ঠু পরিবেশ আইন ও নীতি ইত্যাদি।
সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি
প্রাচীনকাল থেকে বিবর্তনের ধারায় স্বাভাবিকভাবে সমাজের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয় এবং সমাজ ব্যবস্থা আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়ে ওঠার রাস্তায় ধাবিত হয়। যাইহোক সমাজ কাকে বলে এটা আমাদের কাছে জানা। কিন্তু সমাজের বৈশিষ্ট্য কি? এক্ষেত্রে আপনি যে বৈশিষ্ট্যগুলো নজরে রাখতে পারেন সেটা হচ্ছে–
সমাজ পরিবর্তনশীল
মানে পরিবর্তনশীলতা সমাজের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। কেননা সময় যত এগিয়ে চলছে সমাজের পরিবর্তনও ততো দ্রুত সংঘটিত হচ্ছে।
সামাজিক বন্ধন
সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য সামাজিক বন্ধন। আমরা জানি মানুষ সমাজবদ্ধ জীব আর সমাজের বৈশিষ্ট্য সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে ফুটে ওঠে।
সমাজ বহুমুখীনতা
সমাজের মধ্যে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক ক্রীড়া প্রতিক্রিয়া বজায় রাখার ক্ষেত্রে বহু মুখিনতা একটি বিশেষ বিষয়। অতএব এটিও সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য।
আধুনিক সমাজ
এছাড়াও আধুনিক সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জীবন ধরার মানের পরিবর্তন। কেননা পরিবর্তনের সাথে মানুষের পরিবর্তন বা মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আদর্শ সমাজ কাকে বলে
আদর্শ সমাজ হচ্ছে এমন সমাজ যার নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে উন্নত এবং উন্নত জীবন যাপনের জন্য উপযুক্ত হয়। মূলত একেই আদর্শ সমাজ বলা হয়।
আদর্শ সমাজের বৈশিষ্ট্য
আদর্শ সমাজের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল–
- এটি সামাজিক ন্যায় বিচারের উদ্বুদ্ধ।
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করতে সক্ষম।
- নৈতিক ধর্মীয় বা নীতিবান মূল্যবোধ মেনে চলার নিয়ম রয়েছে।
- অর্থনৈতিকার সমাজবদ্ধতা বিদ্যমান অর্থাৎ বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যোমে প্রতিটি ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব এবং কর্মসংস্থান ও সচ্ছলতার সুযোগ তৈরি করা।
- সমাজে সৃজনশীলতা ও নতুনত্বকে উৎসাহিত করা আইন-শৃঙ্খলা বিরাজ এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বিদ্যমান।
সমাজের গুরুত্ব
সমাজ মানব জীবনের অপরিহার্য একটি উপাদান। এর গুরুত্বগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল:
- সহযোগিতা ও সমর্থন: সমাজের জনবল একে অন্যকে ব্যক্তিজীবনে সাহায্য ও সমর্থন করে। এটি তাদের জীবনযাত্রাকে অধিক সহজতর করে তোলে।
- শান্তি ও স্থিতিশীলতা: মানুষ সমাজে একটি নিত্যান্তমূলক সামাজিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, যার মাধ্যমে একটি নিরাপদ ব্যবস্থায় ও সংগঠিতভাবে সমাজে বসবাস করতে পারে।
- মৌলিক প্রয়োজন মেটানো: সমাজর প্রতিটা মানুষের মৌলিক কিছু চাহিদা রয়েছে, যেমন: খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা, শিক্ষা ইত্যাদি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
- সামাজিক বিকাশ: সমাজের মাধ্যমে মানুষের সামাজিকতার বিকাশ ঘটে যেমন মানুষের শারীরিক, মানসিক, এবং নৈতিকতার বিকাশ ঘটে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা, নিয়ম-নীতি ও আইন প্রতিষ্ঠা হওয়া, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা ইত্যাদি নানা বীদ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করার লক্ষ্যে সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আর একটি সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় মূলত সচেতনতা এবং সঠিক আইনের মাধ্যমে।
সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য
আমাদের সমাজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি নির্দিষ্ট একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যা আমাদের সকলকে এই সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলে। আর সেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা উচিত। আসুন তাহলে আমাদের সমাজের প্রতি কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক;
- নিরাপত্তা বজায় রাখা: সমাজের প্রতি আমাদের প্রধান দায়িত্ব হল অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যেগুলো অপরাধমূলক কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো থেকে বিরত থাকা।
- সামাজিক নিয়ম মেনে চলা: সমাজের যেই নির্ধারিত নিয়ম-কানুন ও আচরণবিধি রয়েছে সেগুলো যথারীতি মেনে চলা প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য।
- সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ: সমাজের উন্নয়নে সকলকে সচেতন করা ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা এবং এর পাশাপাশি সকলের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করা।
- শিক্ষার প্রচার: শিক্ষার প্রসার করা সমাজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, যাতে প্রতিটা মানবজাতি শিক্ষিত এবং সচেতন নাগরিক হতে পারে।
- সংস্কৃতি রক্ষা: সমাজের প্রতি প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সমাজের সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তুত উপরে ঐতিহ্য রক্ষা করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া।
- পরিবেশ সংরক্ষণ: সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা ।
সমাজের উপরের উল্লিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো আমাদের সকলেরই মেনে চলা উচিত। এতে সমাজের সংরক্ষণ ব্যবস্থা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। তবে উল্লিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্য ছাড়াও আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে যেগুলোর প্রতি সচেতনামূলক প্রতিরক্ষা চালনা করাটা উচিত।
সমাজ সম্পর্কিত সাধারন জিজ্ঞাসা
সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
সমাজ বিজ্ঞানের জনক হচ্ছে ওগ্যুস্ত কোঁৎ।
সমাজের মূল ভিত্তি কি?
সমাজের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঐক্য, কারণ সামাজিক সংহতি ও সহাবস্থান কেবলমাত্র ঐক্যের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়।
আদর্শ সমাজ কাকে বলে?
যে সমাজে সব সব ধরনের মানুষের জন্য মৌলিক অধিকার, ন্যায় ও সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় তাকে আদর্শ সমাজ বলে।
সমাজ সম্পর্কে লেখকের মতামত
সমাজ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সকলে একত্রে মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোন কাজকে সহজে গ্রহণ করা যায়।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ কোনো না কোনো একটি সংঘবদ্ধ সমাজের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের মানবীয় আচরণ তার নিজ সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ পারস্পরিক নির্ভরশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ গতিশীল সমাজজীবন কামনা করে।
আমরা ইতিমধ্যে সমাজ কি এই বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সামাজিক উপাদান কয়টি ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি ও সমাজের গুরুত্ব এবং সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি সমাজ সম্পর্কে এসকল বিষয়ে ক্লিয়ার হয়েছেন।
সমাজ সম্পর্কিত আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের মাঝে কোন ধরণের মতামত কিংবা প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো তথ্যমূলক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে বা বিভিন্ন জরুরি তথ্য পেতে আমাদের এই কাটিং টু সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।