সাওম শব্দের অর্থ কি – সাওম কাকে বলে – কত প্রকার ও কি কি?

সাওম শব্দের অর্থ কি – সম্মানির পাঠকবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি মহান আল্লাহর রহমতে আপনারা সকলেই ভালো ও সুস্থ রয়েছেন। আজকে আমরা ইসলামিক ক্যাটাগরি থেকে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে সাওম শব্দের অর্থ কি, ও সাওম নিয়ে আরও জরুরি তথ্যাদি।

তো আপনি কি সাওম শব্দের অর্থ কি তা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই উপকারি তথ্যটি আপনার জন্য।ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে মোট ৫টি তার মধ্যে সাওম বা রোজা অন্যতম একটি। মহান আল্লাহ তা’আলা এই সাওম বা রোজা কে প্রতিটি মুসলীম জাতিদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন।

সাওম পালন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। যেগুলি সকল মুসলমানসেরই মানতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো সাওম সম্পর্কে ভালোমতো অবগত নই। তাই আমরা আজকের এই পোষ্টে সাওম শব্দের অর্থ কি ও সাওম সম্পর্কে তুলে ধরবো ইনশা-ল্লাহ।

উপস্থাপনা

আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে ইসলামের মোট ৫ টি স্তরের মধ্যে সাওম হচ্ছে অন্যতম একটি স্তর।  যা তামান দুনিয়ার মুসলিম মিল্লাতের তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার মোতাবেক মহান আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযম  উন্নতি সাধনে সাওম একটি অপরিহার্য ইবাদত।

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আমাদের এই পোষ্টের শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি থাকেন তাহলে এই সাওম নিয়ে যতরকম খুটিনাটি জরুরি তথ্য রয়েছে সেগুলি জেনে নিতে পারবেন ইনশা-ল্লাহ। তো চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা আজকের আলোচ্য টপিকগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

সাওম শব্দের অর্থ কি

সাওম বা রোজা সম্পর্কে আলোচনা করার প্রথমেই আসে সাওম শব্দের অর্থ আসলে কি। সাধারনত সাওম বা রোজা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ থেকে যার একবচনে হচ্ছে সাওম এবং বহুবচনে সিয়াম। যার অর্থ হলো কাজ থেকে বিরত থাকা, কঠোর সাধনা করা, অবিরাম প্রচেষ্টা, সংযম করা, নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি।

সাওম কে আমরা প্রতিটা মুসলমানই রোজা হিসেবে আখ্যায়িত করি। রোজা শব্দটি মূলত ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। “আদি-ইরানীয় ধাতুমূল রোওচাকাহ হতে” যার উপবাস হিসেবে পরিচিত। সাধারনত তামান দুনিয়ার মধ্যে এশিয়া মহাদেশে কালক্রমে আরও সব ভাষার মত সিয়াম শব্দের প্রতিশব্দ রোজা ব্যবহার করা হয়।

যা এই রোজা শব্দ টি পালাক্রমে বাংলা ভাষাতে যুক্ত হয়। সেই আদীমকাল হতে বাংলাতে ইসলামের উপবাস বোঝানোর জন্য এই রোজা প্রতিশব্দ টি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে সাওম শব্দের অর্থ কি তা জেনে নিতে পেরেছেন। এবার চলুন সাওম কাকে বলে তা জেনে নেই।

সাওম কাকে বলে

সাওম বা রোজার অর্থ হচ্ছে মূলত বিরত থাকা। ইসলামের শরিয়তের পরিভাষায় বলা হয়েছে সুবহে সাদিক হতে সুর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে কোনো প্রকার পানাহার বা ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা কে সাওম বা রোজা বলা হয়। ১২ মাসের মধ্যে ১ মাস হলো সাওম পালনের মাস।

📌 আরো পড়ুন 👇

মহান আল্লাহ তায়ালা এই মাসে প্রত্যেক সুস্থ মানুষের জন্য সুবহে সাদিক হতে সুর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন প্রকারের পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। মূলত এ সময়ে পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। সাওম বা রোজা মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি আনুগত্য ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে থাকে।

সাওম কত প্রকার ও কি কি

সাওম শব্দের অর্থ কি ও সাওম কাকে বলে তা আশা করি আপনারা ইতিমধ্যে উপরের অংশটুকু পড়ে জেনে গেছেন। এবার চলুন তাহলে আমরা জানবো সাওম কত প্রকার ও কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাওম কে মূলত ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

সাওম শব্দের অর্থ কি

১। ফরজ রোজা

প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের যে সব রোজা পালন করতে হবে সেগুলোই ফরজ রোজা। ফরজ রোজা আবার ৪ ধরণের হয়ে থাকে যেমন –

  • রামাদান মাসের ফরজ রোজা।
  • রমজান মাসের রোজা যদি কোন কারণবশত ভঙ্গ হয়ে যায় তার কাযা রোজা।
  • রোযা রাখার মান্নত করলে সেটা রাখা ফরজ রোযার মধ্যে পরে।
  • শরিয়তের কারণ ব্যতিত রোজা ভংগ করলে কাফফারা ৬০টি রোজা রাখা।

২। সুন্নত রোজা

মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে মূলত যে রোযা রাখা বা সিয়াম সাধনা করা হয় সেটা সুন্নত রোজা।

৩। ওয়াজিব রোজা

নফল রোযা রাখার সময় কোনো কারণে যদি রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় তাহলে তা পরবর্তীতে ওয়াজিব হয়ে যায়।

৪। নফল রোজা

যে সব রোজা গুলো অধিক পূণ্যের আশায় রাখা হয় সেগুলোই হচ্ছে মূলত নফল রোজা।

৫। মুস্তাহাব রোজা

ইমাম আবু হানিফার মত হচ্ছে, শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা এক সাথে অথবা পৃথক ভাবে রাখা মোস্তাহাব।

৬। মাকরূহ রোজা।

আশুরায় ১ দিন রোজা পালন করা, তবে শুধু শনিবার সওমে বেসাল তথা অনবরত রোজা পালন করা এবং সন্দেহের দিন রোজা পালন করা।

সাওম এর পরিচয়

সাওম এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মূলত বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভের জন্য সব ধরণের পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখার নামই হচ্ছে সাওম বা রোজা। মহান আল্লাহ এ মর্মে ইরশাদ করেছেন – “হে ঈমানদারগণ! রোজা রাখা তোমাদের উপরে ফরজ, পূর্ববর্তীদের উপর যেমনটা করা হয়েছিল; রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করতে পারবে” (সূরা বাকারা -১৮৩)

বছরের বাকি মাস গুলোর মধ্যে এই রমজান মাসটি মুসলিমদের কাছে অনেক বেশি হিদায়াতস্বরুপ হিসেবে পরিচিত। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি পরহেজগারি অর্জন করা শেখায়। এই মাসে প্রচূর পরিমাণে ফজিলত রয়েছে। সাওম বা রোজা প্রতিতা মুসলীম জাতির সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়।

📌 আরো পড়ুন 👇

আপনি যদি সিয়াম সাধনা করেন তাহলে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবেন। এ সম্পর্কে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – “রোজাদারের জন্য ২ টি খুশি রয়েছে। একটি হলো তার ইফতারের সময় এবং আর অপরটি মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।“ (বুখারি ও মুসলিম)

হযরত আদম (আ) এর মাধ্যমে সাওম এর উৎপত্তি হয়েছিল। যখন আদম (আ) জান্নাতের একটি নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন তখন তিনি সাথে সাথে তওবাহ করেছিলেন। কিন্তু ১ মাসেও তার তওবা কবুল হয়নি। পরবর্তীতে ৩০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরে মানে তওবাহ কবুল হওয়ার পর হযরত আদম (আ) এর সন্তানদের উপর ৩০ টি রোজা ফরজ করে দেয়া হয়। এর পর তা যথাক্রমে সমস্ত নবী ও রাসূলগণ রোজা পালন করতেন।

সাওম এর গুরুত্ব

সাওম এর গুরত্ব আসলে বলে শেষ করা যাবে না, এর গুরত্ব অপরিসীম। সিয়াম সাধনা করার মাধ্যমে মানুষ তার সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। রোজা রেখে অনৈতিক কোন কাজে লিপ্ত হতে পারে না। সাওম বা রোজা মানুষের মনে একটি নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে আত্নসংযম হতে শেখায়। এছাড়াও রোজা রেখে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য লাভ করা যায়।

সাওম শব্দের অর্থ কি

ইসলামের সকল ইবাদত এর থেকে মহান আল্লাহ তা’আলা সাওম বা রোজা কে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা একজন রোজাদার ব্যক্তিকে এততাই ভালোবাসেন তাকে আলাদা একটি ফটক এর মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয়নবী বলেছেন –“জান্নাত এর মধ্যে একটি ফটক বিদ্যমান রয়েছে যা রাইয়ান নামে পরিচিত।

যারা রোজা রেখেছিলেন তারা কেয়ামতের দিন সেই রাইয়ান নামক ফটক দিয়েই জান্নাতে অগ্রস্র হবেন। তাছাড়া কেউই সেই রাস্তা দিয়ে  অগ্রসর হইতে পারিবে না। সেদিন একটি ঘোষণা দেওয়া হবে সেটি হচ্ছে, যারা রোজাদার তারা কোথায় আছেন? তখন তারা জেগে উঠবে। তারা ব্যতিত আর কেউ যাবে না। রোজাদাররা ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার পরে রাইয়ান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপরে কেউ এ ফটক দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবে না।“ (বুখারি – ১৮৯৬)

সাওম এর শিক্ষা

সারা বছর ঘুরে রমজান মাসে প্রত্যেক মুমিনের জন্য নাজাত, মাগফেরাত ও রহমতের বার্তা নিয়ে আসে। প্রকৃত মুমিন হিসেবে নিজেকে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে সমর্পন করার মাধ্যমে রোজা অনেক কিছুই শেখায়। একজন রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় খাবার খেতে পারে।

রোজা পালনে সমস্ত মিথ্যাচার, অন্যায় কাজ, অন্যের ক্ষতি অনিষ্ট ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে শেখায়। কারণ রোজাদার কখনোই রোজা রেখে খারাপ কাজে জরাতে পারবে না। সিয়াম সাধনা ইসলামের নিয়মনীতি মেনে আমাদের জন্য সুন্দর একটি সমাজ ব্যাবস্থা তৈরি করতে শেখায়। হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেছেন – মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, সাওম বা রোজা শুধুমাত্র আমারই জন্য। আমি এর যতরকম খুশি রয়েছে এর বিনিময় তোমাদের দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মাকরূহ সিয়াম বলতে কি বোঝায়

মাকরুহ সিয়াম আসলে কখন বা কোন সময় হয় তা জানার পূর্বে জানতে হবে  বুঝতে হবে মাকরূহ সিয়াম বলতে আসলে কি বোঝায়। মাকরুহ শব্দের অর্থ হচ্ছে অপছন্দনীয়। আর মাকরুহ সিয়াম হচ্ছে মূলত যেটি মহান আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রোজা ভেঙ্গে না গেলেও সে পর্যায় চলে যায়। মূলত সিয়াম যে কারনে মাকরুহ হয় তা নিম্নরূপ –

  •  রোজা রেখে প্রচূর কুলি করা, অযু করার সময়ে বার বার গড়গড়া করা, এছাড়া নাক দিয়ে পানি টানলে গলা বা নাকের মধ্যে দিয়ে পানি পেটে চলে যেতে পারে ফলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।
  • আবার রোজা রেখে কোন জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত যেকোনো খাদ্যের স্বাদ জিহবার মাধ্যমে পরখ করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।

তবে এছাড়াও রোজা ভাঙ্গে না কিন্তু ভংগের আশংকা থেকে যায় এমন কার্যকলাপ করার মাধ্যমে রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে।

সাওম সম্পর্কে লেখকের শেষ মতামত

সাওম শব্দের অর্থ কি তা আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। এছাড়াও আমরা সাওম সম্পর্কে আরও নানান ধরণের টপিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যেমন সাওম কাকে বলে, সাওম কত প্রকার ও কি কি,সাওম এর পরিচয়,সাওম এর গুরুত্ব ইত্যাদি। এই আর্টিকেলে কোনো ভুল থাকলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিবেন। এতে আমরা সেই ভুল সংশোধন করতে সক্ষম হব।

পুরো বছরের মধ্যে শুধুমাত্র ১ মাস ফরজ রোজা পালনের মাস। প্রতিটা মুসলমান এই মাসের জন্য অনেক বেশি অপেক্ষা করে। তাই এ মাসে সকলেই অবশ্যই বেশি বেশি ইবাদত ও তওবাহ করুন। যারা তওবা করেন তাদেরকে মহান আল্লাহ তা’আলা ভালোবাসেন। সাওম শব্দের অর্থ কি সম্পর্কিত আমাদের এই পোষ্টিটি এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment