পরিবেশ কি– প্রতিটা মানুষের জীবনের জন্য দরকারি সকল উপাদানের সমন্বয়স্থল হিসেবে এবং এর পাশাপাশি যেখানে প্রতিটা জীবের অস্তিত্ব ও উন্নতি নির্ভর করে, এমন জায়গাকেই পরিবেশ বলে গন্য করা হয়ে থাকে। প্রতিটি জিনিসই মূলত কোন না কোনো পরিবেশে নিয়ে গঠিত। আপনি যদি লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে– একটি জীবের বা একটা প্রাণীর বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবেশ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
একটি পরিবেশ যদি বসবাস করার মত উপযুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে সেই পরিবেশে প্রাণীকুল বা জীবের কখনই কোন্রকম অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্যই সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য সর্বোত্তম একটি পরিবেশ। এছাড়াও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি নিজ কক্ষ পথের এবং আলাদা আলাদা পরিবেশ রয়েছে।
আজকের আর্টিকেলে পরিবেশ কি, পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি পাশাপাশি পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি সেই সম্পর্কে অবগত হবেন। এছাড়াও পরিবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমেই পরিবেশ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পরিবেশ কি
পরিবেষ্টনকারী পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিবেশ হিসেবে রচিত। অতএব পরিবেশ হচ্ছে মূলত এমন একটি অবস্থা যেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে বসবাস করি এবং সেখানে মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিটা জীবের বেঁচে থাকার জন্য দরকারি বা উপযোগী সকল উপাদান পাওয়া যায়।
📌আরো পড়ুন 👇
সহজ ভাষায় আমরা যদি পরিবেশকে সংজ্ঞায়িত করতে চাই তাহলে বলা যায় আমাদের আশেপাশে যা কিছু রয়েছে তার সবকিছু মিলিয়েই আমাদের পরিবেশ গঠিত”। আবার অন্যভাবেও বলা যায় যে – পরিবেশ হচ্ছে সাধারনত এমন একটি অবস্থানভিতিক কাঠামো তামান দুনিয়ার মানুষ জাতি সহ সকল জীব তাদের জীবন যাপন করে যার ফলে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
পরিবেশ হলো মানব জীবনের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের সমষ্টগত রূপ, যেখানে প্রতিটা মানুষের জীবনে একটি সক্রিয় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সত্যি কথা বলতে, পরিবেশ প্রত্যেক জীব ও মানব জীবনের অন্যতম মৌলিক একটি অংশ। এটি কেবলমাত্র সামাজিক উপাদান নয়। বরং মানুষ, উদ্ভিদ, জীব এবং অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাত্রার একটি ভিত্তি।
পরিবেশ শব্দটি ব্যাখ্যা করে আমাদের চারপাশের সমস্ত কিছুকে, যা আমাদের জীবনধারণ, উন্নয়ন এবং জীবনকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে প্রয়োজন।
পরিবেশ কাকে বলে
বিভিন্ন পর্যালোচনা ও গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা পরিবেশকে বিভিন্নভাবে আখ্যায়িত করে থাকেন। একেক জন বিজ্ঞানীর মতে একেক রকম ধারণা সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। যেমন:
- বিজ্ঞানী মাসটন বেটস বলেছেন: পরিবেশ হচ্ছে মূলত সেসব বাহ্যিক অবস্থার সমষ্টি যা প্রতিটা মানুষ জাতি ও জীবের জীবনের বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
- বিজ্ঞানী মারকিউস এবং উডওয়ার্থ বলেছেন: জীবন শুরু হওয়ার পর ব্যক্তির ওপর বাহিরের যা কিছু সক্রিয় হয় তাই হল পরিবেশ।
- মনোবিজ্ঞানী বোরিং লংফিল্ড এবং ওয়েলড বলেছেন: জিন ব্যতীত ব্যক্তির উপর যা কিছুর প্রভাব দেখা যায় তাই হলো পরিবেশ।
এছাড়াও ইউএনইপি এর সংজ্ঞা অনুসারে বলা হয়ে থাকে পরিবেশ বলতে পরস্পর ক্রিয়াশীল উপাদান গুলোর মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিক ও জীব মণ্ডলির প্রণালীকে বোঝায় যার মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদান গুলো বেঁচে থাকে, বসবাস করে।
পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি
পরিবেশ কি বা কাকে বলে এটা আমরা ইতিমধ্যে উপরের অংশে জেনেছি, কিন্তু পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি! তা আমরা হয়ত জানি না। আসুন তাহলে কথা ন বাড়িয়ে এই বিষয়েও জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত পরিবেশের উপাদান গুলোর উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো:
- ভৌত পরিবেশ
- কৃত্রিম পরিবেশ
নিম্নে ভৌত কৃত্রিম পরিবেশ এবং কৃত্রিম পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো:
১. ভৌত পরিবেশ
সাধারণত আমাদের চারপাশে প্রাকৃতিক ভাবে সেসকল উপাদান বিদ্যমান রয়েছে সে সমস্ত উপাদান নিয়ে একটি প্রাকৃতিক ভৌত পরিবেশ গঠিত হয়। অতএব ভৌত পরিবেশ বলতে পরিস্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীর চারপাশের সেই সমস্ত উপাদান রয়েছে যেগুলো মূলত প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান এবং এ সমস্ত উপাদান মানব জাতি এবং জীবের উপর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।
এরমধ্যে রয়েছে–
- মাটি,
- পানি,
- বায়ু,
- জলবায়ু,
- পাহাড় সমুদ্র নদী,
- গাছ গাছালি সহ প্রভৃতি।
যেগুলো ভৌত পরিবেশ এ থাকা জীব বৈচিত্র কে প্রভাবিত করতে সহায়তা করে ও প্রতিটা জীবের বাসস্থান থেকে শুরু করে জীবন ধারণের উপযোগী করতে সহায়ক।
২. কৃত্রিম পরিবেশ
কৃত্রিম পরিবেশ সামাজিক পরিবেশ হিসেবেও পরিচিত। মূলত যে পরিবেশ প্রাকৃতিকভাবে গঠিত নহে সেই পরিবেশকে সামাজিক বা কৃত্রিম পরিবেশ বলা হয়। মোটকথা যেসব পরিবেশ মানুষ জাতি সৃষ্টি করেছে তাই হচ্ছে কৃত্রিম পরিবেশ।
এছাড়াও কৃত্রিম পরিবেশ হচ্ছে একটি মানব-নির্মিত পরিবেশ, যা মানুষের হাতে কিংবা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নয়। এই ধরনের পরিবেশ মূলত প্রকৃতির পরিবেশ থেকে আলাদা হয়ে থাকে এবং মানব জাতির প্রয়োজন বা সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম পরিবেশের অন্তর্গত হচ্ছে মূলত শহরের ভবন, রাস্তা-ঘাট, উদ্যান, এবং অন্য যেসব অবকাঠামো রয়েছে সেগুলো। এটি হল এমন একটি স্থান যেখানে মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যেমন আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি। এছাড়াও হতে পারে বিভিন্ন গবেষণাগার, গ্রিনহাউজ অথবা যে কোনো সিমুলেটেড ভার্চুয়াল এপরিবেশ।
পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি
তো আশা করছি উপরের উল্লিখিত অংশ থেকে পরিবেশ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি এই নিয়ে আমরা যে ব্যাখ্যা বা সংখ্যাগুলো উল্লেখ করেছি সেসকল বিষয়ে আপনারা একটি ক্লিয়ার ধারণা পেয়েছেন।
যাইহোক আপনার মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি? আসুন, আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটিও বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক। পরিবেশের উপাদানকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে বলব– পরিবেশের উপাদান গুলোকে প্রধানত ২ ধরণের হয়ে থাকে যথা–
- জীব এবং
- জড়বস্তু।
অপরদিকে পরিবেশের মূল উপাদানকে ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়, সেগুলো হলো–
- মাটি, পানি, বায়ু, আবহাওয়া ও জলবায়ু
- জীবজন্তু, বৃক্ষরাজি
- সামাজিক জনসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।
পরিবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
জীব কুল থেকে শুরু করে প্রাণিকূল অবদি সবকিছুই একটি পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। এর কারণ হচ্ছে পরিবেশ আমাদের প্রতিটা মানইব জাতির এবং জীব যাত্রার মানকে প্রভাবিত করে, যার ফলে আমাদের জীবন যাত্রার মান অনেকটাই সহজ সরল হয়। এছাড়াও প্রতিটা মানবজাতি থেকে এই পরিবেশ থেকে নানান ধরণের উপকারী জিনিস পেয়ে থাকি যেগুলো আমাদের বেচে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন– অক্সিজেন (O2)।
এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর সাথে মানব জীবনের সাথে পরিবেশ ওতপ্রতভাবে জড়িত এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি স্টেপে পরিবেশ মানবজাতির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এক্ষেত্রে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আমাদের বেঁচে থাকার মূল ভিত্তিই হচ্ছে পরিবেশ। তবে সেটা অবশ্যই কিন্তু সুস্থ পরিবেশ হওয়াটা জরুরি।
কোন মানবজাতি বা কোন প্রাণীকে দূষিত পরিবেশ অসুস্থ পরিবেশ টিকে রাখতে পারেনা। আর তাই এই পরিবেশ সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের গুরুত্বসমূহ জেনে নেওয়াটা দরকার। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই নিচের কয়েকটি পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরেছি।
- পরিবেশ বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার সেসব কিছু আমাদের যোগান দিয়ে থাকে
- প্রাণ ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে পরিবেশ
- প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে পরিবেশ
- যুগের পর যুগ সুস্থ পরিবেশ জীব বৈচিত্রকে রক্ষা করার পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন ও আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ এ সহায়ক ভূমিকা রাখে
- পৃথিবীতে জীবন নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে পরিবেশ।
পরিবেশের সুবিধাসমূহ
আমরা উপরের অংশ থেকে পরিবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা হয়তোবা এতক্ষণে এর গুরুত্ব কি তা জানতে পেরেছেন। তবে এছাড়াও পরিবেশের রয়েছে নানা কার্যকারিতা বা বিভিন্ন উপকারিতা। তো আপনি যদি পরিবেশের সুবিধা সমূহ জানতে চান তাহলে এই অংশটুকু মনযোগ দিয়ে পড়ে জেনে নিন–
- পরিবেশ আছে বলেই আমরা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাই।
- দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন পানি, জ্বালানি বা খনিজ উপাদান সবকিছুই পাওয়া সম্ভব হয় পরিবেশের কারণে।
- সুস্থ পরিবেশের কারণেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় সেই সাথে মানসিক প্রশান্তি মেলে।
- সুস্থ ও সুন্দর নিরাপদ পরিবেশ প্রাকৃতিক সভা বৃদ্ধি করে সে সাথে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানে সাহায্য করে।
- ঠিক এই কারণগুলোর জন্যই পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম বলে আখ্যায়িত করা হয় আর আমাদের প্রত্যেকের উচিত পরিবেশকে রক্ষার্থে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।
পরিবেশ সম্পর্কে লেখকের মতামত
তাহলে পরিশেষে উপরের আলোচনা থেকে আপনাদের এতটুকু এটা বোঝা যায় পরিবেশ আমাদের প্রতিটা মানব জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
তো আমরা আশা করছি আপনারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে পরিবেশ কি, পরিবেশ কাকে বলে, পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি, পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি , পরিবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং পরিবেশের সুবিধাসমূহ নিয়ে আপনি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। তাই নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে আসুন আমরা পরিবেশ রক্ষার্থে এগিয়ে আসি।
পরিবেশ সম্পর্কে আপনাদের মনে কোন ধরণের প্রশ্ন কিংবা মতামত থেকে থাকতে তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি এতক্ষণ সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরও তথ্যমূলক বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় এবং দরকারি আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।