কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা বলে আমাদের বাংলাদেশে নানান প্রকারের খামার গড়ে উঠেছে। আর বাংলাদেশ যেহেতু একটি কৃষি প্রধান দেশ সেহেতু এই দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি খামার রয়েছে। কৃষিভিত্তিক এই সমাজ ব্যবস্থায় রয়েছে ডেইরি ফার্ম, ঝিনুকের খামার, কাঁকড়ার খামার, মাছের খামার, মৌমাছির খামার, হরিণের খামার, কুমিরের খামার ছাড়াও আরও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের খামার।
তো আমরা আজকের এই আর্টিকেলে পারিবারিক কৃষি খামার নিয়ে আলোচনা করব। আপনি যদি আমাদের সাথে শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি থাকেন, তাহলে পারিবারিক কৃষি খামার কি জেনে নেয়ার পাশাপাশি, কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কাকে বলে, কৃষি খামারের প্রকারভেদ, কৃষি খামারের কার্যাবলী এবং কৃষি খামার এর বৈশিষ্ট্য সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারবেন। তাহলে আসুন আর বেশি কথা বনা বাড়িয়ে প্রথমেই পারিবারিক কৃষি খামার কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পারিবারিক কৃষি খামার কি
পারিবারিক কৃষি খামার কি- এটি এমন একটি খামার যেখানে পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে কৃষি খামার তৈরি করা হয়, মুলত তাকেই পারিবারিক কৃষি খামার বলা হয়। আর খামার হচ্ছে মুলত কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, মাছ ইত্যাদি কৃষিজ উৎপাদন করা যায়।
খামার এমন একটি ভূখন্ড যেখানে একক কিংবা যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরণের কৃষি পণ্য উৎপাদন কাজ পরিচাল্না করা হয়। মোট কথা পারিবারিক কৃষি খামার বিভিন্ন ফসল, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী, মাছ ইত্যাদি সহ আরও বিভিন্ন কৃষি উৎপাদন করার স্থান। পারিবারিক কৃষি খামারের ভূখন্ড নিজস্ব মালিকানাধীন বা বর্গা বা বন্ধকী খামারে ব্যবহৃত শ্রমিক হতে পারে যা পারিবারিক শ্রমিক হিসেবে পরিচিত।
পারিবারিক খামারের অর্থের উৎস ৩ ধরণের হতে পারে যথা–
- ১। পারিবারিক উৎস,
- ২। ব্যাংক,
- ৩। অন্য উৎস।
কৃষি খামার কি
কৃষি খামার হচ্ছে এমন একটি জায়গাকে বোঝানো হয় যেখানে কৃত্রিম ভাবে যেকোন প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পালন করা হয়। মূলত গবাদী পশু থেকে শুরু করে কিছু বাণিজ্যিক উদ্ভিদ এবং প্রাণী এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদন ও বিপণন করা হয়।
যেখানে কৃত্রিম পদ্ধতি (artificial method) অবলম্বন করে বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ উৎপাদন করা হয় আবার সেই সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবসার মান উন্নতি সাধ্ন করা হয় মূলত সেটিই কৃষি খামার হিসেবে পরিচিত বা তাকেই কৃষি খামার বলা হয়ে থাকে। কৃষি খামারে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উদ্ভিদ এবং প্রাণী উৎপাদন এবং বিপণন করা হয়।
কৃষি খামার কাকে বলে
একেবারে সহজ ভাষায় বলতে গেলে কৃষিজ উপাদান উৎপাদন করার জন্য মূলত যেই ইউনিট ব্যবহার করা হয় তাকেই কৃষি খামার বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে সুষ্ঠ সমন্বয় সাধন ও ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থাকে কৃষি খামার বলা হয়। আর এসব খামার উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
যেমন: কেউ যদি ফসল উৎপাদন করে তাহলে সেটিকে করলে ফসল খামার বলা হয় আর কেউ যদি হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু উৎপাদন করে তাহলে সেটিকে হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশু খামার বলা হয়। কৃষি খামার হচ্ছে মূলত কৃষিজ উৎপাদনের একটি প্রতিষ্ঠান।
কৃষি খামারে সাধারনত প্রধানত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সহ আরও নানান প্রকারের উৎপাদন করা হয়। যদি আরও সহজ ভাষায় বোঝানো হয়, কৃষি খামার হচ্ছে মূলত এমন একটি ভূখণ্ড যেখানে একজন মানুষ চাইলে নিজের উদ্যোগে অথবা যৌথ ভাবে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করতে পারে।
কৃষি খামার করতে হলে আপনার নিজ ভূমি থাকতে হতে পারে আবার আপনি চাইলে বন্ধকৃত ভূমি নিয়ে সেখানে কৃষিজ উৎপাদন করতে পারেন। কৃষিজ খামারে ব্যক্তির নিজেই বা শ্রমিক দ্বারা কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
কৃষি খামারের প্রকারভেদ
একটি খামারের সুস্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এবং এর পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে যেখানে ব্যবসা সাধন করার উদ্দেশ্য রয়েছে সে স্থানকে কৃষিখামার বলা হয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কৃষি খামারকে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
📌আরো পড়ুন 👇
কৃষি খামারকে বিভিন্ন খাতের উপর ভিত্তি করে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো:
পোল্ট্রি খামার
পোল্ট্রি খামারে বিশেষ করে হাঁস মুরগির পাশাপাশি, কবুতর কোয়েল পাখি পালন করা হয়। আর এই খামার এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত ডিম এবং মাংস উৎপাদন করা।
ফসলের খামার
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য ফসলের খামারে নানান ধরণের ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ফসল খামারের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত বিশেষ করে নানান প্রকারের শাক-সবজি উৎপাদন করা।
গবাদি পশুর খামার
গবাদি পশু খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি পালন করা হয়ে থাকে। গবাদি পশুর খামার এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত মাংস এবং দুধ উৎপাদন করা।
মাছের খামার
মাছের খামারে নানান ধরণের মাছ কৃত্রিমভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এই খামারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত মাছ উৎপাদন করা।
নার্সারি
নার্সারিতে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ গাছ, এবং ছোট এবং বড় ফসলি চারা উৎপাদন করা হয়।
গৃহপালিত পশুর দুগ্ধ খামার
গৃহ পালিত পশুর দুগ্ধ খামারে গরু, ছাগল, মহিষ পালন করা হয়ে থাকে এবং এর উদ্দেশ্য দুধ জাতীয় পন্য উৎপাদন করা।
কৃষি খামারকে আকার এবং আয়তনের দিক দিয়ে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয় যথা–
- বাণিজ্যিক খামার: যে খামারে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন পন্য সামগ্রী বিক্রয় করার জন্য অনেক বড় পরিসরে এবং বেশি পুঁজি নিয়ে পরিচালনা করা হয় তাকেই বাণিজ্যিক খামার বলে। এ ধরণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন করা।
- পারিবারিক খামার: স্বল্প পরিসরে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য এবং সেখানে খুব বেশি মূলধন বিনিয়োগ করা ছাড়াই যে খামার পরিচালনা করা হয় তাকে পারিবারিক খামার বলা হয়। বাণিজ্যিক খামারে কিছুটা ঝুঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু পারিবারিক খামারে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক কম।
কৃষি খামারকে মালিকানার উপর ভিত্তি করে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো:
- যৌথ খামার: একজন এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে যখন একটি খামার পরিচালনা করে তখন তাকে যৌথ খামার বলে। এখানে মুনাফা সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নেয়।
- রাষ্ট্রীয় খামার: রাষ্ট্রীয় মালিকানায় যেসব খামার পরিচালিত হয় তাকে রাষ্ট্রীয় খামারস বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্র খামারের মুনাফা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র ভোগ করে।
- ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার: যেসব খামার একজন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তাকে ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার বলা হয়।
কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য
আপনি যদি একটি কৃষি খামার গড়ে তুলতে চান, তাহলে উক্ত খাবার অবশ্যই আদর্শ খামার হতে হবে। আর একটি খাবার আদর্শ হওয়ার বহুগুণে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কৃষি খামারকে একটি আদর্শ খামার করতে হলে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা একান্ত প্রয়োজন। বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
- কৃষি খামারে যেগুলো আসবাবপত্র বা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো হাতের কাছে থাকতে হবে,
- খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা থাকতে হবে,
- খামারের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় রাখাটা জরুরি তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে,
- কৃষি খামারে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী যাতে খারাপ বা নষ্ট না হয়ে যায় এজন্য মূল বাজারের পাশে কৃষি খামারটি স্থাপন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে,
- কৃষি খামারের মূলধন পরিমিত পর্যায়ে রাখাটা জরুরি কেননা খামারে অর্ধের প্রয়োজন পড়লে সেখানে সংস্থান করতে সহায়তা করবে তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে,
- খামারের শ্রমিকদের দক্ষ হওয়াটা অত্যান্ত হতে হবে।
কৃষি খামারের কার্যাবলী
আপনারা অনেকেই কৃষি খামারের কার্যাবলী নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা পোষ্টের এই অংশে এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি। আসুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে কৃষি খামারের জন্য যেগুলো কার্যাবলী প্রয়োজন সেগুলো নিচের অংশ থেকে জেনে নেই।
📌আরো পড়ুন 👇
কৃষি খামারের জন্য যেগুলো কার্যাবলী প্রয়োজন সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
- কৃষি খামারে যেসব উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো সহজলভ্যতা থাকতে হবে,
- যোগাযোগের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা থাকতে হবে,
- সঠিক পরিকল্পনা মোতাবেক কৃষি খামারে কার্য পরিচালনা করতে হবে,
- খামার পরিচালনা সুষ্টুভাবে করার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার মানসিকতা থাকা জরুরি,
- উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারজাতকরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ এর সঠিকভাবে ব্যবস্থা করতে হবে,
- পণ্য উৎপাদন করার জন্য যা যা লাগবে তার প্রত্যেকটির সদ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- পণ্য উৎপাদন করার সময় যথাসম্ভব সচেতন থাকতে হবে যাতে শ্রমিকের কোন ক্ষতি না হয়।
কৃষি খামারের ব্যবস্থাপনা
আপনি যদি একজন সফল খামারি হতে চান, তাহলে আপনাকে আগে খামার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্দেশ্য হতে পারে যথা–
- স্বল্প খরচে উৎপাদন বাড়ানো
- খরচের সাথে মুনাফা সর্বাধিক করা
- বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন ঝুঁকি কমিয়ে আনা
- পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা।
- প্রাকৃতিক উৎসের বা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।
পারিবারিক কৃষি খামার সম্পর্কে লেখকের মতামত
উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন খামার স্থাপন করতে অনেকেই এগিয়ে আসছে। খামার স্থাপনে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় সেগুলো হল এ খামারের অবস্থান, মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চত, উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দাম, খনন ব্যবস্থা, শ্রম, জমির মূল্য, পণ্যের পরিবহন, বিপণন ও দাম।
শস্য, গরু-ছাগল খামারের পাশাপাশি আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির করার বিষয়টি দিনের পর দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ হচ্ছে একটি কৃষি নির্ভরশীল দেশ। তাই এই দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের পারিবারিক কৃষি খামার কাকে বলে, কৃষি খামারের প্রকারভেদ এবং কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে।
আপনি যদি এমন শিক্ষামূলক আরও জরুরি আর্টিকেল পড়তে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে পারিবারিক কৃষি খামার নিয়ে আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই কাটিং টু ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।