দৈনন্দিন জীবনে মাটি ছাড়া জীবজগতের স্বাভাবিক জীবন যাপন করা অসম্ভব। আপনি কি মাটি কাকে বলে তা জানতে চাচ্ছেন? কৃষিকাজ থেকে শুরু করে জীবনধারণ করা অবদি বলতে গেলে প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের মাটির প্রয়োজন। তাই মাটি সম্পর্কে আমাদের সকলেরই একটি সম্মুখ এবং পরিষ্কার ধারণা থাকাটা খুবই জরুরি।
আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মূলত মাটি নিয়ে। আপনারা অনেকেই হয়তো মাটি কাকে বলে, মাটি কত প্রকার ও কি কি, মাটির উপাদান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানেন না।
তো আপনি যদি মাটির এসব প্রয়োজনীয় দিকসমূহ সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি মনযোগ সহকাড়ে পড়তে থাকুন, তাহলে আশা করছি মাটি নিয়ে অজানা তথ্যগুলো জানতে পারবেন। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা প্রথমেই মাটি কি তা বিস্তারিত জেনে নেই।
মাটি কি
পৃথিবীর উপরিভাগে নরম আবরণ দ্বারা আবৃত অংশকেই মাটি বলা হয়। এই মাটি মূলত পানি এবং বায়ুর সংমিশ্রণ, জৈব পদার্থ, খনিজ পদার্থ নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রত্যেকটি প্রাণী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মাটির উপর নির্ভরশীল।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের জন্য মাটি খুবই প্রয়োজনীয়। তবে পরিবেশ রক্ষা করা ও খাদ্য উৎপাদন করা ছাড়াও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় মাটির ভূমিকা অপরিসীম। বহু বছর ধরে শিলা ক্ষয় হতে হতে দিনের পর দিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। পরবর্তীতে এই ছোট ছোট কণাগুলো জৈব পদার্থের সাথে মিশ্রিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। তবে এটি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার ফল।
মাটি কাকে বলে
মাটি কাকে বলে- ভূত্বকের যে দিনের পর দিন উপরি ভাগে ক্ষয় হতে থাকা শিলা চূর্ণের সাথে জৈব এবং অজৈব বস্তু একত্রে মিশে নরম ও অসমসত্ত্ব আস্তরণ তৈরি করে তাকেই মাটি বলা হয়। যদি আরও সহজ ভাষায় বলি তাহলে, ভু-ত্বকের ওপরের স্তরে অবস্থিত খুবই সূক্ষ্ম শিলা খন্ড দিয়ে যে নরম আস্তরণ ও শিথিল স্তর তৈরি হয়ে থাকে তাকেই মাটি বলে।
মাটি কত প্রকার ও কি কি
আপনারা অনেকেই গুগলের কাছে প্রতিনিয়ত জানতে চেয়েছেন যে মাটি কত প্রকার ও কি কি। তাই আমরা পোষ্টের অংশে মাটির প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মাটির প্রকারভেদ নিয়ে জেনে নেওয়া যাক।
📌আরো পড়ুন 👇
মাটিকে সাধারনত ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো:
- এটেল মাটি,
- দোআঁশ মাটি এবং
- বেলে মাটি।
১. এটেল মাটি
মূলত যেসব মাটিতে বালির পরিমান কম থাকে এবং পলি ও কাঁদার পরিমান বেশি থাকে তাকেই এঁটেল মাটি বলা হয়। এটেল মাটি অন্যান্য মাটির তুলনায় খুবই নরম, ছোট দানা বিশিষ্ট এবং মিহি হয়ে থাকে।
এটেল মাটির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হলো:
- এটেল মাটি তুলনামূলক অনেক ছোট দানাদার যুক্ত হয়ে থাকে,
- এই মাটি পানি দিয়ে ভেজালে আঠালো প্রকৃতির হয় এবং শুকিয়ে গেলে বেশ মসৃণ হয়ে থাকে,
- এটেল মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অন্যান্য মাটির তুলনায় বেশি,
- এই মাটির ভেতরে বাতাস চলাচল করার ক্ষমতা কম থাকে,
- এই মাটি মুলত ধান চাষের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। অন্য ফসল ফলানর জন্য এটেল মাটি উপযুক্ত নয়,
- এই মাটি মূলত অনেকটা হালকা লালচে বিশিষ্ট হয়ে থাকে,
- জৈব পদার্থের পরিমাণ এটেল মাটিতে তুলনামূলক কম থাকে,
- এটেল মাটিতে পানি জমে থাকার প্রবণতা বেশি এবং পুষ্টি উপাদান অনেকটা কম থাকে ইত্যাদি।
২. দোআঁশ মাটি
যে মাটিতে পলি ও কাদার পরিমাণ এবং বালির পরিমাণ সমান অনুপাতে থাকে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। কৃষি ভিত্তিক ভাবে বলতে গেলে, দোআঁশ মাটিকে সাধারনত ভারসাম্যপূর্ণ মাটি বলা হয়। কারণ এই মাটিতে বালির পরিমাণ, পলি এবং কাদার পরিমাণ একেবারে সমান অনুপাতে বিদ্যমান থাকে। ফসল চাষাবাদ করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী দোআঁশ মাটিকে বলা হয়ে থাকে।
দোআঁশ মাটির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হলো:
- দোআঁশ মাটিতে মূলত নানান প্রকারের ফসল যেমন: ধান, গম, মরিচ, ভুট্টা, আলু, পিয়াজসহ আরও অনেক ধরনের শাকসবজি চাষ করা সম্ভব।
- দোআঁশ মাটিতে আলো বাতাস পরিপূর্ণভাবে খুব সহজেই চলাচল করতে পারে,
- দোআঁশ মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা অন্যান্য মাটির তুলনায় বেশি থাকে,
- এই মাটিতে বালি, পলি এবং কাঁদা সমান অনুপাতে বিদ্যমান থাকে,
- দোআঁশ মাটির মধ্যে পানি এবং বাতাসের মধ্যে যে ভারসাম্য প্রয়োজন সেটা পরিপূর্ণ ভাবে থাকে,
- দোআঁশ মাটিতে যেগুলো উদ্ভিদ জন্মে তা অতি সহজেই মাটির ভেতরে ঢুকতে পারে।
৩. বেলে মাটি
যে মাটিতে পলি ও কাঁদার পরিমান কম থাকে এবং বালির পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বেলে মাটি বলে। বেলে মাটিতে বিশেষত কয়েকটি ফসল অনেক ভালো ফলে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মূলত বাঁধাকপি, তরমুজ, চীনা বাদাম, মিষ্টি আলু এবং শসা উল্লেখযোগ্য।
বেলে মাটির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হলো:
- বেলে মাটি মূলত পানির ধারণ ক্ষমতা অনেক কম যার ফলে তাই এর চাষ যোগ্যতা বেশ কম,
- এই মাটিতে অন্যান্য মাটির তুলনায় পুষ্টি উপাদান খুব কম পরিমাণে থাকে,
- এই মাটির রং মূলত হালকা বাদামী রঙের হয়ে থাকে,
- অন্যান্য মাটির চেয়ে বেলে মাটির কনার আকার বড় হয়ে থাকে,
- এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মূলত হালকা দানাদার ও শুকনো ধরনের প্রকৃতির হয়,
- বেলে মাটি মরুভূমি এবং চরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়,
- বেলে মাটির পানির ধারন ক্ষমতে খুবই কম তাই এতে জন্মানো কোন গাছ শিকড় পর্যন্ত পানি পায় না।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে মাটি কত প্রকার ও কি কি তা বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, মাটির উপাদান কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
মাটির উপাদান কি কি
আপনারা অনেকেই গুগলের কাছে প্রতিনিয়ত জানতে চেয়েছেন যে মাটির উপাদান সমূহ কি কি/ তাই আমরা পোষ্টের অংশে মাটির উপাদানসমূহ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মাটির উপাদান কত প্রকার ও কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
📌আরো পড়ুন 👇
মাটির প্রধান উপাদান মূলত ৪ টি, সেগুলো হলো:
- বায়ু,
- পানি,
- জৈব পদার্থ এবং
- খনিজ পদার্থ।
বড় বড় শিলাখণ্ড ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মূলত খনিজ পদার্থ সমূহ তৈরি হয়ে থাকে। আর এই খনিজ পদার্থ মাটির কঠিন পদার্থ হিসেবে পাওয়া যায়। মাটিতে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা, মৃত গাছপালা, জীবজন্তুর পচা দেহ মিশে গিয়ে জৈব পদার্থ সৃষ্টি হয়। মাটির ক্ষেত্রে এই জৈব পদার্থ বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে।
মাটিতে পরিমিত পরিমাণে পানি যদি না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে উদ্ভিদ খাদ্য শোষণ করে নিতে পারে না। তাই বলা মাটির একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি।
অপরদিকে মাটির ভেতরে যেসব জীবজন্তু বসবাস করে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করার জন্য অক্সিজেন প্রবেশ করার স্থানের প্রয়োজন হয়। মাটির ভিতরে বায়ু প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে, ফলশ্রুতিতে মাটির মধ্যকার জীবজন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পারে।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে মাটির উপাদান কত প্রকার ও কি কি তা বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
আপনারা অনেকেই গুগলের কাছে প্রতিনিয়ত জানতে চেয়েছেন যে মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? তাই আমরা পোষ্টের অংশে মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
মাটির যতসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো ৩ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, সেগুলো হলো:
- মাটির ভৌত বৈশিষ্ট্য,
- মাটির জৈবিক বৈশিষ্ট্য এবং
- মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য।
মাটির ভৌত বৈশিষ্ট্য
মাটির ভৌত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- মাটির বুনট,
- মাটির ঘনত্ব,
- মাটির রন্ধতা,
- মাটির গঠন এবং
- মাটির রং।
মাটির ভৌত বৈশিষ্ট্যৈর রং নির্ভর করে খনিজ পদার্থের উপর, মাটির একক আয়তনে কি পরিমান পদার্থ আছে তা মাটির ঘনত্বের উপর নির্ভর করে, মাটির কণাগুলো গুচ্ছ ভাবে পানি ধারণ ক্ষমতা উদ্ভিদের শিকড় বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
মাটির জৈবিক বৈশিষ্ট্য
মাটির জৈবিক বৈশিষ্ট্য বলতে আমরা আসলে মাটিতে কি পরিমান জীবজন্তু বসবাস করে তার একটি সক্রিয় অনুপাতকে বোঝানো হয়ে থাকে। মাটিতে মূলত নানান প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কেঁচোসহ আরো অন্যান্য কিছু সরীসৃপ প্রাণী বসবাস করতে পারে। তবে এগুলো মাটির জন্য ক্ষতিকারক নয় বরং মাটির উপরতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।
মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্তর্গত থাকে মাটির পিএইচ ব্যালেন্স, মাটির সি ই সি ক্ষমতা, মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থের পরিমাণ।
মাটি সম্পর্কে লেখকের মতামত
দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি কাজ ওতপ্রোতভাবে মাটির উপর নির্ভরশীল। মাটি ছাড়া জীবজগৎ কল্পনা করা যায় না। মাটি সম্পর্কে সম্মুখ ধারনা দেওয়ার জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল সাজানো হয়েছিল মাটি কাকে বলে, মাটি কত প্রকার ও কি কি, মাটির বৈশিষ্ট্য এবং মাটির উপাদান সম্পর্কে।
আপনি যদি এমন শিক্ষামূলক আরও জরুরি আর্টিকেল পড়তে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে শিল্পকলা নিয়ে আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই কাটিং টু ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।