আপনারা হয়তো অনেকেই জয়তুন ফলের নাম শুনেছেন কিন্তু জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম ও জয়তুন ফল খাওয়ার উপকারিতাগুলো জানা নেই। তো আপনি কি জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম জানতে চেয়ে আমাদের আর্টিকেলটি ওপেন করেছেন? তাহলে আপনি এখন ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।
কেননা এই পোষ্টে আমরা জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়মসহ এই ফল নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আমাদের সাথে শুরু থেকে শেষ অবদি থাকেন তাহলে জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়ার পাশাপাশি জয়তুন ফলের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিতে পারবেন।
যেগুলো তথ্য পরবর্তীতে আপনার অনেক উপকারে বা কাজে আসবে বলে আমার আশাবাদী। তাই আমার মনে হয় আপনারা একেবারেই অবহেলা না করে এই পোষ্টটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে জয়তুন ফল নিয়ে বিস্তারিতভাবে যাবতীয় তথ্যগুলি জেনে নেওয়া।
উপস্থাপনা – জয়তুন ফল
পবিত্র আল কোরআনে যেগুলো ফলের উল্লেখ রয়েছে সেগুলো ফল অবশ্যই কল্যানকর ও বরকতময়। অধিকাংশ মুমিনরা এর ব্যতিক্রম অতি সহজে বিশ্বাস করতে পারে না। পবিত্র আল কোরআনে যইতুন ফল এর নাম এসেছে মোট ৭ জায়গায়। যইতুন সবার কাছেই বরকতময় ফল হিসেবে পরিচিত।
তাই এই বরকতময় ফল খাওয়ার নিয়ম, এর উপকারিতা এবং এর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে জয়তুন ফলের পুষ্টি গুনাগুন বা এই ফলে কি কি উপাদান রয়েছে সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিব।
জয়তুন ফলের পুষ্টি উপাদান
জয়তুন ফলের পুষ্টি উপাদান নিয়ে আলোচনা করার আগে জয়তুন গাছ ও ফলের পরিচিত তুলে ধরবো। জয়তুন গাছ মূলত ৮ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এবং এর পাতা ৪ থেকে ১০ সে.মি. লম্বা ও ১ থেকে ৩ সে.মি. প্রশস্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে জয়তুন ফল ছোট আকৃতির হয়ে থাকে লম্বায় মাত্র ১ থেকে ২.৫ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে।
এই ফলে রয়েছে প্রচূর পরিমাণে খনিজ উপাদান এবং পুষ্টিকর উপাদান যেমন-
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম
- আয়োডিন
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- এন্টি-অক্সিডেন্ট
- ফসফরাস ইত্যাদি।
তবে এছাড়াও আমাদের দেহে যে সকল ভিটামিন অনেক বেশি প্রয়োজন পড়ে দরকার এবং যে সকল উপাদানগুলো শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে তার সব উপাদান এই জয়তুন ফলের মধ্যে মহান আল্লাহ তা’আলা ভরপুর দিয়ে দিয়েছেন। আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে জয়তুন ফলের পুষ্টি উপাদানগুলো জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম
আপনারা অনেকেই জয়তুন ফল নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন জাগতে পারে। যেমন আপনারা অনেকেই জানতে চান যে জয়তুন ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি? চলুন তাহলে আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটি এই অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক। এই ফল খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে অনেকেই এই ফল অন্যান্য ফলের মত সরাসরি খেতে পারেন না।
📌আরো পড়ুন 👇
সরাসরি এই ফলটি খেতে না পারলে হালকা উষ্ণ গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে খালি পেটে এই ফল খাবেন না এ বিষয় সচেতনতা অবল্মবন করবেন অবশ্যই। এছাড়া পরিমাণে বেশি এই ফল খাওয়া যাবে না কারণ পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেললে অনিদ্রা এবং প্রচন্ড মাথাব্যথা সমস্যা হতে পারে।
আপনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২টি জয়তুন ফল খেতে পারেন এর বেশি খাবেন না। তাহলে আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ত্বীন ও জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম জেনে নেই।
ত্বীন ও জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম
এখন বাজারে ত্বীন ও জয়তুন ফলের তেল পাওয়া যায়। এছাড়াও আমরা অনেকেই বেশি উপককারিতা পাওয়ার জন্যে ত্বীন ও জয়তুন ফল একসাথে খেয়ে থাকেন। তাই আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আপনাদের জানাবো ত্বীন ও জয়তুন ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৭ দিন ১ টেবিল চা চামচ পরিমাণ তেল নিয়ে শরীরে লাগিয়ে নিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
শিশু জন্ম দেওয়ার পর তাদের পেটে বিভিন্ন ধরনের কালচে দাগ দেখা দেয়। তো আপনি যদি এই দাগের উপর ত্বীন ও জয়তুনের তেল নিয়মিত ভালোভাবে মালিশ করেন দেখবেন ধীরে ধীরে দাগ গুলো সম্পূর্ণ উঠে গেছে।
সাধারণত ত্বীন ও জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম এখন পর্যন্ত সেভাবে পরীক্ষিত বা পরীক্ষামূলক নিয়ম পাওয়া যায়নি। তাই অন্যান্য ফল আপনারা যেভাবে খেয়ে থাকেন ত্বীন ও জয়তুন ফল আপনি সেভাবে খেতে পারবেন।
তবে ত্বীন ও জয়তুন ফল খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে যদি মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া সভব হয় তাহলে। সামান্য পরিমাণ মধুর সাথে এই ফল মিশিয়ে ভিজিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিবেন এর পরে খেয়ে নিবেন। এছাড়াও দুধের সাথে মিশিয়েও এই ফল খাওয়া যায়। এতেও বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। এটা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।
জয়তুন ফল খাওয়ার উপকারিতা
জয়তুন ফলের অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো জানলে হয়তো আপনারা আজকে থেকে খাওয়া শুরু করে দিবেন, তাহলে আসুন আর সময়ক্ষেপণ না করে জয়তুন ফলের উপকারিতা জেনে নেই।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে এই ফল বেশ কার্যকরী হতে পারে। আপনি যদি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চান তাহলে জয়তুন ফলের তেল এবং জয়তুন ফল নিয়মিত খেতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়ে যাবে।
রক্তচাপ দূর করে
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রক্তচাপ নিয়ে টেনশনে থাকেন। আপনি জানলে হয়ত অবাক হবে যে এই জয়তুন ফল রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি চাইলে রক্তচাপ কমাতে জয়তুন ফল নিয়মিত খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যেতায় ভুগছেন। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন কিন্তু আপনি চাইলে জয়তুন ফলকে বেছে নিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কার্যকরী উপায় হিসেবে অবলম্বন করতে পারেন।
হৃদরোগ নিরাময় করে
বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই আপনাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। আপনার যদি হৃদরোগ হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে প্রথমে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে জয়তুন ফল খেতে পারেন এতে ভালো উপকারিতা পাবেন।
ওজন কমায়
যেসব ব্যক্তিদের শরীরের ওজন তুলনামূলক অনেক বেশি তারা চাইলে ওজন কমানোর জন্য জয়তুন ফল ডায়েট খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। তাহলে খেয়াল করবেন আপনার শরীরের ওজন অনেকটাই কমে গেছে। তবে ওজন কমানো যাবে বলে পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া যাবেনা পরিমাণ মতো খাবেন তাহলেই এর উপকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন।
খুশকি দূর করে
বর্তমানে মাথায় খুশকি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই চিন্তিত। অনেকেই মাথার খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন এই মাথার খুশকি ভালো করতে জয়তুন ফলের তেল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত জয়তুন ফলের তেল মাথায় ব্যবহার করেন তাহলে দেখবেন মাথার খুশকি পুরোপুরি ভালো না হলেও অনেকটাই কমে গেছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগ খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি হয়ে যায় তাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রন করাটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। এই ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে রেহাই বা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে জয়তুন ফল বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত জয়তুন ফলে খেতে পারেন তাহলে আশা করছি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চোখের কালো দাগ দূর করে
অতিরিক্ত রাত জেগে পড়াশোনার কারণে কিংবা তার জেগে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়।
তখন দেখতে কিন্তু খুবই খারাপ লাগে, চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে চাইলে আপনাকে জয়তুন ফলের তেল নিয়মিত চোখের কালো দাগের স্থানে ভালভাবে মালিশ করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
রক্তশূন্যতা দূর করে
বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ রক্তশূন্যতায় ভুগেন বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলারা এ সময়ে রক্তশূন্যতায় ভোগেন। রক্তশূন্যতা দূর করতে চাইলে জয়তুন ফল পরিমাণ অনুযায়ী নিয়মিত খেতে হবে।
চুলের যত্নে জয়তুন
জয়তুন ফল থেকে তৈরি তেল চুলের জন্য অনেক উপকারী। কারন এই তেলে রয়েছেপর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই যা আমাদের চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের প্রদাহ থেকে রক্ষা করে থাকে।
জয়তুন ফলের দাম কত
সাধারণত বাংলাদেশের বাজারে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফল দেখে থাকি কিন্তু এই জয়তুন ফল খুব কমই আমাদের চোখে ধরে। কারণ এটি বাংলাদেশে খুব কম উৎপাদন হয়। এই ফলের দাম কত সেটি অনেক মানুষেরই অজানা। তাই চলুন জেনে নিই জয়তুন ফলের দাম কত তা জেনে নেই।
জয়তুন ফল বেশিরভাগ সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে যার ফলে এর দাম তুলনামূলক একটু বেশি হয়। জয়তুন ফল প্রতি ৩৫০ গ্রাম কৌটা কিনতে হলে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা গুনতে হবে। আর এই ফল আপনি মোটামুটি ৪০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। আশা করছি আপনারা এই অংশে জয়তুন ফলের দাম কত জানতে পেরেছেন। এবার জয়তুন ফল খেতে কেমন তা জেনে নেই।
জয়তুন ফল খেতে কেমন
জয়তুন ফল এক ধরনের অন্যরকম স্বাদের ফল। যা অন্যেন্য ফলের স্বাদের তুলনায় টোটালি আলাদা। আপনি হয়তো প্র্যাকটিকালি না খেলে বুঝতে পারবেন না।
এই ফল খেতে না মিস্টি, না টক , না ঝাল। বলা যায় এটি খেতে তিক্ত বা কিছুটা পানসে প্রজাতি স্বাদের ফল।
জয়তুন ফল সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জয়তুন ফল সম্পর্কে জানানোর বা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা এখানে জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম, জয়তুন ফলের উপকারিতা, জয়তুন ফলের পুষ্টি উপাদান ইত্যাদিসহ এর বিভিন্ন দিক আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা জয়তুন ফল সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পেরেছেন।
জয়তুন ফল সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এতে তারাও এই জয়তুন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্যগুলো জানতে পারবেন। বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় ও জরুরি তথ্য পেতে আমাদের কাটিং টু ব্লগ সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।