গ্যালাক্সি কাকে বলে– এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই এই বিষয়টা কি আপনি কখনও ভেবেছেন? সূর্য যেমন মিল্কিও গ্যালাক্সির একটি অংশ বটে। তেমনি আমরা রাতের আকাশে যে অসংখ্য তাঁরা দেখি সেগুলো কিন্তু কোন না কোন গ্যালাক্সির একটি অংশ। আপনারা হয়তো অনেকেই গ্যালাক্সি নামক শব্দটি শুনেছি।
কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় যে “গ্যালাক্সি কাকে বলে” কিংবা আপনার পরিক্ষায় প্রশ্নটি আসলে তখন কিন্তু আপনি এর সজ্ঞা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে পারবেন না। আর মূলত এজন্যই আমরা আজকের সম্পন্ন আর্টিকেলজুড়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে যাবতীয় বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে গ্যালাক্সি নিয়ে অদ্যপন্ত জানতে শেষ অবদি পড়ুন।কেননা আজকে আমরা গ্যালাক্সি কাকে বলে, গ্যালাক্সি কত প্রকার ও কি কি, গ্যালাক্সির গঠন, সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি এবং সূর্য এবং পৃথিবী কোন গ্যালাক্সির অংশ তা নিয়ে আলোচনা করবো।
তো আপনি যদি গ্যালাক্সির সংজ্ঞা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে চান এবং গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে জরুরি বিষয়গুলো অবগত হতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি পড়ে নিতে পারেন। তাহলে আসুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে গ্যালাক্সি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
গ্যালাক্সি কি
মহাবিশ্ব রহস্যময় হওয়ার ফলে প্রাচীনকাল থেকেই এর বিষয়বস্তু সমস্ত মানবজাতিকে আকৃষ্ট করেছে। আর তার মধ্যে গ্যালাক্সির ধারণা হচ্ছে অন্যতম। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে সহজ ভাষায় বলতে চাইলে, গ্যালাক্সি হলো মূলত নক্ষত্র, ধূলিকণা, গ্যাস এবং অন্যান্য যেসকল অন্তরীক্ষ পদার্থের সমষ্টি রয়েছে যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সহায়তায় একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
📌আরো পড়ুন 👇
গ্যালাক্সিতে এসমস্ত বিষয়বস্তু একটি নির্দিষ্ট ছায়াপথ ঘিরে সাজান থাকে যাতে একে অপরের সাথে সংঘর্ষ না ঘটে। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীগণ এখন পর্যন্ত প্রায় ২ ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন। যেগুলোর আকার, আকৃতি এবং উপাদানগত দিক থেকে একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা। তবুও গঠনের প্রকৃতির ক্ষেত্রে এগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
গ্যালাক্সি কাকে বলে
সাধারণত গ্যাস, মেঘযুক্ত ধূলিকণা এবং কোটি কোটি নক্ষত্রকেই গ্যালাক্সি বলা হয়। আমাদের সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে (আকাশগঙ্গা ছায়াপথে) বসবাস করে থাকি। গ্যালাক্সি যেই মধ্যবর্তী গ্যাস, ধূলিকণা রয়েছে তা নক্ষত্র মহাকর্ষ বল দ্বারা একত্রে আটকে থাকে। একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল যা এর কেন্দ্রে অবস্থান করে সেটি প্রতিটি গ্যালাক্সির এই বিশাল মহাকর্ষ বলের জোগান দেয়।
গ্যালাক্সি কত প্রকার ও কি কি
আপনি হয়তো উপরের অংশটুকু পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয় গ্যালাক্সি কি বা গ্যালাক্সি কাকে বলে সেটা ক্লিয়ার ধারণা পেয়েছেন। এবার আমরা এই অংশে গ্যালাক্সির প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব।
গ্যালাক্সির গঠনের দিক দিয়ে গ্যালাক্সিকে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয় যথা–
- উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি (Elliptical Galaxy)
- সর্পিল গ্যালাক্সি (Spiral Galaxy)
- অনিয়তাকার গ্যালাক্সি (Galaxy of Irregulars)
- বামন গ্যালাক্সি (Dwarf Galaxy)
নিম্নে উল্লিখিত সকল গ্যালাক্সি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে দেয়া হলো:
১. উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি (Elliptical Galaxy)
যেগুলো মূলত বৃত্তাকার বা গোলকের মত দেখতে তাকেই উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি বলা হয়। এর উপাদানগুলো একটি গোলকীয় ছায়াপথে ধারাবাহিকভাবে সাজানো থাকে। তবে এতে নতুন নতুন তারা তৈরি হচ্ছে। এতে কিছু কিছু স্থানে সামান্য ধূলিকণা বা গ্যাসীয় উপাদান ব্যতিত আর অন্য কিছু পাওয়া যায় না।
২. সর্পিল গ্যালাক্সি (Spiral Galaxy)
সর্পিল বা স্পাইরাল গ্যালাক্সি হচ্ছে মূলত আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মত যেন প্রতিটা নক্ষত্রসমূহ একটি স্পাইরাল ছায়াপথে কেন্দ্রের চারপাশে সজ্জিত থাকে। তবে এতে প্রচুর পরিমানে নক্ষত্র এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
৩. অনিয়তাকার গ্যালাক্সি (Galaxy of Irregulars)
অনিয়তাকার গ্যালাক্সির বলতে গেলে নির্দিষ্ট কোনো গঠন আকৃতি নেই। এটি যেকোনো সময়ই উপবৃত্তাকার বা স্পাইরাল গ্যালাক্সির আকৃতি ধারণ করতে পারে। তাই এর গঠন সবসময় বিকৃতি ঘটে।
৪. বামন গ্যালাক্সি (Dwarf Galaxy)
এই গ্যালাক্সিগুলোকে বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর চারপাশে আবর্তন করতে দেখা যায়। ধারণা করা হয় বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর তৈরির মূল কারিগর বা “বিল্ডিং ব্লক” হলো এই বামন গ্যালাক্সিগুলো যাতে কয়েক বিলিয়ন নক্ষত্র থাকে। তো আশা করি আপনি এই অংশ থেকে গ্যালাক্সি কত প্রকার ও কি কি তা পরিস্কার ধারণা পেয়েছেন। এবার চলুন, গ্যালাক্সির গঠন সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
গ্যালাক্সির গঠন
গ্যালাক্সির প্রকারভেদ সম্পর্কে তো আমরা জেনে নিলাম। কিন্তু আপনি কি গ্যালাক্সির গঠন সম্পর্কে জানেন বা এত কোটি বছর বয়সী গ্যালাক্সি কীভাবে তৈরি হয়েছে সেই বিষয়ে কি আপনি অবগত আছেন? এখন এইটা শুনে নিশ্চয় জেনে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনে জেগেছে। তাহলে এখন এর বিস্তারিততে আসা যাক।\
📌আরো পড়ুন 👇
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, গ্যালাক্সির অভ্যন্তরীণ অংশগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে। গ্যালাক্সির সাধারনত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।
- কেন্দ্র (৩০ হাজার আলোকবর্ষ ব্যাস সম্বলিত স্ফীত অংশ)।
- চাকতি ( ডিস্ক এর মত অংশ যেখানে সৌরজগত বিদ্যমান, লম্বা-১ লাখ আলোকবর্ষ এবং পুরু- ১০০০ আলোকবর্ষ)।
- বলয় বা হ্যালো (৩ লাখ আলোকবর্ষ ব্যাস সম্বলিত স্থান যাতে নক্ষত্রসমূহ থাকে)।
গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে সমস্ত সৌরজগতসমূহ একটি পেঁচানো অবস্থায় বাহুতে সাজানো থাকে। যার ফলে এই পেঁচানো বাহুতে সৌরজগত ও নক্ষত্রসমূহ উভয়ই আনুমানিক প্রতি ২০ কোটি বছর ধরে গ্যালাক্সিকে একবার প্রদক্ষিণ করে যার দূরত্ব ২৮ হাজার আলোকবর্ষ।
গ্যালাক্সি গ্রুপ কি
গ্যালাক্সি সম্পর্কিত আরও একটি অনেক জনপ্রিয় পরিচিত ধারণা হলো গ্যালাক্সি গ্রুপ। এই গ্রুপ এর মাধ্যমে কিছু গ্যালাক্সির সমষ্টিগত দিক বোঝায় যা মূলত এক ধরণের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা একে অপরের সাথে ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত থাকে। এই গ্যালাক্সি গ্রুপেরও বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে যেমন–
- কম্প্যাক্ট গ্রুপ (Compact Group)
- জীবাশ্ম গ্যালাক্সি গ্রুপ (Fossil Galaxy Group)
- প্রোটো গ্রুপ (Proto Group)
- বুলেট গ্রুপ (Bullet Group)
সংক্ষেপে উল্লিখিত গ্রুপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক–
কম্প্যাক্ট গ্রুপ (Compact Group)
গ্যালাক্সি গ্রুপের কম্প্যাক্ট গ্রুপটি সবচেয়ে কম সংখ্যক গ্যালাক্সিতে সীমাবদ্ধ থাকে যা আসলে প্রায় ৫টির কাছাকাছি। কম্প্যাক্ট গ্যালাক্সি গ্রুপ এর সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত গ্রুপ হলো স্টেফানস কুইটেন্ট, যা সবচেয়ে ফটোজেনিক (Photogenic) গ্যালাক্সি গ্রুপ। এতে বিশেষত অন্ধকার পদার্থের ভূমিকা রাখে বেশি।
জীবাশ্ম গ্যালাক্সি গ্রুপ (Fossil Galaxy Group)
জীবাশ্ম গ্যালাক্সি গ্রুপ গতিশীল ঘর্ষণের কারণে সৃষ্টি হয়। একই গোষ্ঠীর গ্যালাক্সিগুলো একে অন্যের সাথে পরস্পরভাবে মিলিত হয় যার ফলে মিথস্ক্রিয়ার কারণে এই ফসিল গ্রুপের উৎপত্তি হয়ে থাকে। আর এদের পূর্বপুরুষ গোষ্ঠীর এক্স-রে হ্যালোর (X-ray haloes) কথাও এক্ষেত্রে উল্লেখ্য।
প্রোটো গ্রুপ (Proto Group)
প্রোটো গ্রুপ বলতে মূলত যে গ্যালাক্সি গ্রুপ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যমান আছে। অর্থাৎ সহজভাবে বলতে গেলে গ্যালাক্সি এবং প্রোটোগ্যালাক্সি ডার্ক হ্যালোতে (Protogalaxy Dark Halo) সংযুক্ত হওয়ার সময়কালীন গ্রুপটিকেই প্রোটো গ্রুপ বলা হয়।
বুলেট গ্রুপ (Bullet Group)
এই গ্রুপটি গ্যালাক্সির স্বাভাবিক পদার্থ এবং অন্ধকার পদার্থের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটি প্রদর্শন করে। অর্থাৎ উজ্জ্বল গ্রুপ এবং অন্ধকার মাঝে যে দলটি একত্রিত হয় তাকেই বুলেট গ্রুপ বলে।
এছাড়াও লোকাল বা স্থানীয় কিছু গ্রুপ আছে যা বিশেষভাবে কোনো গ্রুপের সাথে উল্লেখ্য নয়। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও এই স্থানীয় গ্রুপেরই সদস্য।
পৃথিবী এবং সূর্য কোন গ্যালাক্সির অংশ
পৃথিবী এবং সূর্য মূলত মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অংশ হিসেবে পরিচিত। এটি একটি স্পাইরাল বা সর্পিলাকার গ্যালাক্সি যা সূর্যসহ আরও ১০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র এবং বহু গ্রহ-উপগ্রহ, ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় বস্তুসমূহ ধারণ করে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত কৃষ্ণ গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল নামক একটি অংশ রয়েছে যাতে ধারণা করা হয় যে সেখানে যেকোনো পদার্থই নিমিষেই বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলের ভেতরের কোনো তথ্য একারণে সংগ্রহ করা যায়নি।
সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি
আপনারা অনেকেই জানতে চান যে সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি? মূলত গ্যালাক্সি গ্রুপগুলো জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের অন্তরীক্ষের সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নামটা জেনে রাখাটা উচিত। সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম হলো “আলসিওনিয়াস”(Alcyoneus)। আর এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে। এই গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বড়।
এই রেডিও গ্যালাক্সি আসলে কীভাবে এতটা বিস্তৃত হয়েছে সেই বিষয়ে এখন অবদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায় নি। তবে অনেকে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে এর আশেপাশের কসমিক পরিবেশ অন্য গ্যালাক্সিগুলোর তুলনায় অনেক কম ঘনত্বসম্পন্ন। একারণেই এরা দ্রুত এবং সহজে বিস্তৃত হতে পারে।
এখনো খুবই ধীর গতিতে সামান্য পরিমাণ বিস্তৃতি চলছে এর। আর এই রেডিও গ্যালাক্সিগুলো সাধারণ গ্যালাক্সির থেকে আলাদা।
গ্যালাক্সি সম্পর্কিত সাধারন জিজ্ঞাসা (FAQs)
গ্যালাক্সির সংখ্যা কত?
গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় একশ বিলিয়ন
আমাদের গ্যালাক্সির নাম কি?
আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
গ্যালাক্সি সম্পর্কে লেখকের মতামত
এতক্ষণ আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তাতে গ্যালাক্সির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। গ্যালাক্সি সম্পর্কে জানতে হলে যে বিষয়টি সবার প্রথমে আসে তা হলো এর গঠন, প্রকার এবং বিভিন্ন উপাদান।
মহাবিশ্বের এই কোটি কোটি গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বিজ্ঞানীগণ হয়ত গবেষণার মাধ্যমে আরও চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করবেন গ্যালাক্সি সম্পর্কে।
গ্যালাক্সি সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে কোন ধরণের মতামত বা প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো শিক্ষামূলক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে বা বিভিন্ন জরুরি তথ্য পেতে আমাদের এই কাটিং টু সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।