বীজ কাকে বলে- সাধারণত নিষেকোত্তর রূপান্তরিত এবং পরিস্ফুটিত ডিম্বক বীজ হিসেবে পরিচিত। উদ্ভিদ ভেদে কিছু বীজ রয়েছে সেগুলো আবার কার্নেল হিসেবে পরিচিত। বীজ হোক কিংবা কার্নেল যাই বলুন না কেন বীজ হচ্ছে মূলত গাছের সেই অংশ যেখান থেকে নতুন গাছ উৎপাদন করা হয়।
প্রতিটা গাছের বীজ একটি আবরণ দ্বারা চার দিকে আবৃত থাকে এবং এতে বীজের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন হয় তা খোলসের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকে। আবৃত বীজী এবং নগ্নবীজী উদ্ভিদের পরিপক্ক ডিম্বকের সফল নিষেক এর পরিবর্ধনের ফসল। বীজ কিছু কিছু সময় মাতৃগাছের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্তনের ফসল হিসেবেও সঞ্চিত অবস্থায় থাকে।
উদ্ভিদের বংশবিস্তার সম্পন্ন হয় মূলত বীজের মাধ্যমেই, যা পরাগায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তো আপনি কি বীজ কাকে বলে তা জানতে চাচ্ছেন? এর পাশাপাশি বীজ কত প্রকার ও কি কি, বীজের প্রকারভেদ ও ভালো বীজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই ব্লগ পোষ্টটি আপনার জন্য অনেক উপকার হতে চলেছে।
তো আপনি যদি বীজের এসব প্রয়োজনীয় দিকসমূহ সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি মনযোগ সহকাড়ে পড়তে থাকুন, তাহলে আশা করছি বীজ নিয়ে অজানা তথ্যগুলো জানতে পারবেন। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা প্রথমেই বীজ কি তা বিস্তারিত জেনে নেই।
বীজ কি
উদ্ভিদ তত্ত্ব এবং কৃষি তত্ত্ব মোতাবেক পরাগায়ন বীজের সংজ্ঞা মূলত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমে উদ্ভিদ তত্ত্ব অনুসারে বলতে গেলে, ফুলের পরাগরেণু দ্বারা ডিম্বক নিষিক্ত হওয়ার পর পরিপক্ক যে ডিম্বক তৈরি হয় তাকেই বীজ বলা হয়।
অপরদিকে কৃষি তত্ত্ব অনুসারে, উদ্ভিদের যে অংশটি আবারও বংশবিস্তার এর উদ্দেশ্যে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হয় তাকেই বীজ বলা হয়ে থাকে। আশা করছি উদ্ভিদ তত্ত্ব এবং কৃষি তত্ত্ব অনুসারে বীজের সংজ্ঞা কি তা জানতে পেরেছেন। আপনি যদি বীজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান তাহলে শেষ অবদি পড়ুন।
বীজ কাকে বলে
বীজ মূলত এক ধরণের ভ্রূণীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। যার বাইরে যে আবরণ থাকে তা প্রতিরক্ষামূলক হয়ে পরিপক্ক ভাবে থাকে। এটি পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হওয়া পরিপক্ক ডিম্বাণু। ভ্রূণকোশ থেকে ভ্রূণ এবং ডিম্বাশয়ের ত্বক থেকে নিষিক্ত হওয়ার পর ক্রমশগ বীজের বাইরের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ তৈরি হয়।
📌আরো পড়ুন 👇
সহজ ভাষায় বলতে গেলে জমিতে ফসল উৎপাদন করার জন্য যা কিছু বপন করা যায় তাই হল বীজ। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে: আলুর জন্য কন্দ বপন করা হয় এবং ভুট্টার বীজ বপন করা হয় যা মূলত ত একটি ভূষি অথবা খোসা দ্বারা চারিদিকে আবৃত থাকে। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের জন্যেও বীজ বপন করা হয়ে থাকে যা ভুসি দ্বারা আবৃত থাকে।
সাধারণত ডিম্বাশয় এর মধ্যে সুপুষ্পক উদ্ভিদের বীজ থাকে। আমাদের এই বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বীজ রয়েছে যেগুলো আসলে “শুকনো ফল” থেকে তৈরি করা। ধারণা করা হয় যে, প্রাচীন যুগের উদ্ভিদ গুলো ছিল নগ্নবীজী এবং এগুলোতে সেভাবে কোনরকম ডিম্বাশয় ছিল না।
আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বীজ কাকে বলে বা বীজ সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছেন। এবার চলুন, বীজ কত প্রকার ও কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
বীজের প্রকারভেদ
একক বীজের আকার, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন কম হয়ে থাকে। বীজকে মূলত বেশ কয়েকটি ভাগে বিভিক্ত করা হয়ে থাকে। আসুন তাহলে বীজের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেই:
📌ফসল উৎপাদন করার ক্ষেত্রে যেসব বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হয় যথা:👇
- উদ্ভিদ তাত্ত্বিক বীজ এবং
- কৃষি বীজ।
১। উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ (Botanical Seed)
নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ বলে, অর্থাৎ ফুলের পরাগায়ন ঘটানোর জন্য স্ত্রী অঙ্গ ও পুরুষ অঙ্গের মিলনের ফলে এ বীজ উৎপাদিত হয়। যেমন-👇
- তৈল বীজ (সরিষা, তিল, তিসি),
- ডাল বীজ (মসুর, মুগ, মাষকালাই, খেসারি, ফেলন),
- দানা শস্য বীজ (ধান, গম, ভুট্টা, চিনা, কাউন, বার্লি) ইত্যাদি।
২। কৃষি বীজ (Agricultural Seed)
উদ্ভিদ বা গাছের যে কোনো অংশ বা অঙ্গ যেমন- ফল, বীজ, কাণ্ড, পাতা, শিকড় ইত্যাদি যা উপযুক্ত স্থানে অনুকুল পরিবেশে নতুন গাছের জন্ম দিতে সক্ষম তাকেই কৃষি বীজ বলা হয়। যেমন-
- ধান,
- গম,
- ভুট্টা,
- সরিষা,
- মুসুর,
- মুগ কাও (আখ, গোলআলু),
- পাতা (পাথরকুচি),
- শিকত্ব (মিষ্টি আলু, কাকরোল) ইত্যাদি।
📌আর যদি বীজের শ্রেণি বিন্যাস করা হয় তাহলে বীজকে প্রধান ৩ ভাগে ভাগ করা হয় যথা: 👇
- ব্রিডার ব্রিজ,
- ভিত্তিবীজ,
- প্রত্যায়িত বীজ।
১. ব্রিডার বীজ (Breeder Seed)
সাধারণত গবেষণাগারে বা বিশেষ পরিবেশে নতুন জাতের যে বীজ উৎপন্ন করা হয়ে থাকে তাকে ব্রিডার বীজ বলে।
২. ভিত্তি বীজ (Foundation Seed)
ব্রিডার বীজ এর মত ফ্রেশ কিন্তু পরিমাণে বেশি এমন ধরনের বীজকে ভিত্তি বীজ বলা হয়ে থাকে। এরাও ব্রিডার নিজের মত বিশুদ্ধ পরিবেশে তৈরি হয়।
৩. প্রত্যায়িত বীজ (Certified Seed)
ভিত্তি বীজ থেকে যে বীজ তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে কৃষকদের জন্য বাজারজাতকরণ করা হয় তাকে প্রত্যায়িত বীজ বলা হয়ে থাকে।
বীজ সংরক্ষণ কাকে বলে
মাঠ থেকে সংগৃহীত প্রক্রিয়াজাতকৃত বীজ বিভিন্ন পদ্ধতিতে (শুকানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ) সঠিকভাবে গুদামজাত করে রাখাকে বীজ সংরক্ষণ বলে।
ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য কি কি
আপনারা অনেকেই ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য কি কি সেই সম্পর্কে প্রতিনিয়ত গুগলের কাছে জানতে চান। মূলত এজন্যই আমরা পোষ্টের এই অংশে ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এ বিষয়ে নিচের অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক।
ফসল উৎপাদন করার জন্য যেসব কৃষি উপকরণগুলো ব্যবহার করা হয় তা হলো- বীজ, সার, সেচ, বালাইনাশক ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে বীজই হচ্ছে একমাত্র জীবন্ত উপকরণ এবং বীজই কৃষি উৎপাদনের চাবিকাঠি। আপনি যদি ভালো বীজ সংগ্রহ না করেন তাহলে যতই অন্যান্য সকল উপকরণ পরিমিতভাবে প্রদান করেন না কেন আপনি কখনই কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে সক্ষম হবেন না।
আমরা মূলত বীজ বলতে শুধুমাত্র হয়তো উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজকে বীজ হিসেবে বুঝে থাকি। কিন্তু আসলে আপনি যদি আপনার জমিতে ভালো ফলন পেতে চান, তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভালো বীজ পরিমিত ভাবে চিনতে হবে এবং কৃষি উৎপাদনে ভালো বীজ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
ভালো মানের ফসল উৎপাদন করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মূলত নিখুঁত ও সক্রিয় বীজ সংগ্রহ করা। আপনি যদি বীজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখেন তাহলেই খুব সহজেই অনুমান করতে পারবেন যে আসলে ভালো বীজ কোনটি এবং কোনটি খারাপ বীজ। তাহলে আসুন বীজের সেই কয়েকটি বিষয় কি কি তা এক নজরে বীজের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেওয়া যাক: 👇
- অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৮০ ভাগ এর উপরে হতে হবে,
- ভালো বীজ দেখতে সবসময় উজ্জ্বল রংয়ের হয়,
- বীজের আদ্রতা হতে হবে প্রায় ১২ শতাংশ এর কাছাকাছি,
- সবগুলো বীজের আকার প্রায় সমান হবে, এক্ষেত্রে বীজের ওজনগুলো প্রায় একই রকমই হবে,
- ভালো বীজের তেজ দেখলেই বোঝা যায় এর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কতটুকু,
- বীজের সুপ্ততা থাকা জরুরী,
- বীজ ধুলাবালি মুক্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে,
- বীজ গজানোর ক্ষমতা থাকতে হবে ৭০ থেকে ৮০ভাগ,
- ভালো বীজ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই গজাবে,
- ভালো বীজের সাথে অন্য কোন বীজের মিশ্রণ থাকবে না,
- বীজ সম্পূর্ণভাবে আগাছা মুক্ত থাকবে।
আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য বা ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য কি কি সেই সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছেন। এবার চলুন, ভালো বীজের গুরুত্ব সমূহ জেনে নেওয়া যাক।
বীজের গুরুত্ব সমূহ
আপনারা অনেকেই ভালো বীজের গুরুত্ব সম্পর্কে হয়তো জানেন না এইজন্য ভালো বীজের মরম কি সেটা বুঝে না। তাই তারা গুগলের কাছে ভালো বীজের বীজের গুরুত্ব কি তা প্রতিনিয়ত জানতে চাই। আর মূলত সেজন্যই আমরা পোষ্টের এই অংশে ভালো বীজের বীজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এ বিষয়ে নিচের অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক।
📌ভালো বীজের গুরুত্ব সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো- 👇
- ভালো বীজ গজায় তাড়াতাড়ি।
- ভালো বীজের চারা বাড়ে তাড়াতাড়ি
- জমিতে পরিমিত সংখ্যক চারা জন্মায়
- শিষ বড় হয়, নানা বড় হয় অথবা ফল বড় হয় ও ফলন বেশি হয়
- ফসলের মান ভালো হয়
- কৃষি উৎপাদন ব্যয় কম হয়।
- কৃষক লাভবান হয়।
আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ভালো বীজের গুরুত্ব বা ভালো বীজ কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ তা হয়ত এতক্ষণে আপনারা ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছেন। এবার চলুন, ভালো বীজের আকৃতি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
বীজের আকৃতি সমূহ
ভালো নিজের আকৃতি নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন সংখ্যক পদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই বিষয়ে আমরা নিচে উদাহরণস্বরূপ কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো: 👇
- রিনিফর্ম আকৃতির বীজ,
- বর্গাকার বা আয়তাকার আকৃতির বীজ,
- ত্রিভুজ আকৃতির বীজ,
- ডিম্বাকার বা ওবোভেট আকৃতির বীজ,
- উপবৃত্তাকার আকৃতির বীজ,
- লেন্টিকুলার,
- আবলং আকৃতির বীজ ইত্যাদি।
উদ্ভিদ ভেদে নিজের আকৃতি ও সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ বীজ ডিক্স বা প্লেট এর মত, গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি ধরনের হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ভালো রং হয়ে থাকে বাদামী এবং কালো। এছাড়া অন্যান্য রঙেরও বীজ থাকতে পারে, তবে সেগুলো আমাদের দেশের খুব বিরল।
বীজ সম্পর্কে লেখকের মতামত
যেকোনো জমি থেকে ভালো মানের ফসল পাওয়ার জন্য অবশ্যই বীজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বীজ যাচাই-বাছাই করার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে বীজ কি বা কাকে বলে, বীজের প্রকারভেদ, ভালো বীজের আকৃতি এবং ভালো বীজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য।
আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে বীজ সম্পর্কে আপনাদের মাঝে কোন ধরণের মতামত কিংবা প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো শিক্ষামূলক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে বা তথ্য পেতে আমাদের এই কাটিং টু ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।