আপনি কি ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় জানতে চাচ্ছেন? আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা যাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে থাকেন। আবার তাদের হয়তো ব্যায়াম করার মতো হাতে খুব একটা সময় থাকে না বিধায় তাদের ব্যায়াম করাও হয় না ওজনও কমে না। আপনি কি জানেন ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় রয়েছে।
তবে মনে রাখাটা জরুরি যে ওজন বাড়ানোর জন্য যেমন অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমন তেমনি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কিন্তু সময়ের প্রয়োজন হবে। আপনি চাইলেই ১/২ দিনে ওজন কমাতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে জানতে হবে ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট সম্পর্কে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
উপস্থাপনা
সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে হলে আমাদের দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। যে কোন মানুষের শরীরের ওজন বেশি হলে বিভিন্ন রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারে, ফলে দেহের স্বাস্থ্য ঝুঁকিটা দিনের পর দিন বেড়ে যায়।
আর দেহের ওজন বেশি হয়ে গেলে আমরা অনেকেই মানসিক অস্বস্তিও থাকে। এজন্য আমাদের যাদের দেহের ওজন অনেক বেশি তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে ওজন কমানো খুবই জরুরী। তাহলে আসুন আর কথা না বাড়িয়ে প্রথমে জেনে নেই দ্রুত ওজন কমে কি খেলে।
দ্রুত ওজন কমে কি খেলে
আমরা অনেকেই হয়তো দ্রুত ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করে থাকি। যেমন কেউ ওষুধ খেয়ে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় অনুসরণ কেউ আবার ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে কিন্তু আপনি যদি খাবার খাওয়ার দিকে সচেতন না হন তাহলে প্রতিদিন ব্যায়াম কিংবা ওষুধ সেবন করে কোন উন্নতি পাবেন না।
দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেলে আপনাকে খাবার খাওয়ার দিকে সঠিক ধারণা থাকতে হবে তাহলে খুব সহজেই আপনার শরীরে দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন।
কেননা আপনি যদি অতিরিক্ত এনার্জি বা তেল যুক্ত খাবার বেশি বেশি খান তাহলে আপনার শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পাবেন ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। এই ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসার জন্য কিছু খাদ্য অভ্যাস মেনে চললে শরীরের দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। দ্রুত ওজন কমে কি খেলে সে বিষয়ে তালিকা দেওয়া হল
- প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন
- নরমাল চাল না খেয়ে ব্ল্যাক কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন
- প্রতিদিন প্রচূর পরিমাণে পানি করুন
- সকালে ঘুম থেকে পেস্তা বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন
- মাশরুম জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন
- প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন
- অলিভ অয়েল দিয়ে খাবার রান্না করার চেষ্টা করুন
- ব্রোকলি খেলে ওজন কমাতে অনেক সহায়তা করে
- বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে
চর্বি, শর্করা যুক্ত খাবার থেকে বিরত থেকে আপনি যদি উল্লেখিত খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে দ্রুত ওজন কমে যাবে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে দ্রুত ওজন কমে কি খেলে তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় জেনে নেই।
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে কম খেলে নাকি ওজন কমে যায়। কথাটি কি আদও সত্য? না একদমই সত্য নয়। কেননা বিশেষজ্ঞরা বলেন কম খেলে ওজন কমে না। বরং এর ফলে শরীরে বিষ-ব্যাথাও বাড়বে।
📌আরো পড়ুন 👇
আপনারা অনেকেই চাচ্ছেন ব্যায়াম না করে কিভাবে ওজন কমানো যায়। আপনি মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে ব্যায়াম ছাড়াও কি ওজন কমানো সম্ভব? হ্যা অবশ্যই সম্ভব। চলুন তাহলে ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়গুলো জেনে নেই।
তরল ক্যালরি না খাওয়া
অবসাদ আর ক্লান্তি দূর করতে আমরা অনেকেই কফি পান করে থাকি যা মূলত ওজন বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। এজন্য কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিশ্রমী হওয়া
ব্যায়ামের কাজটি আপনারা চাইলে প্রতিদিনের কাজের মধ্যেই সেরে ফেলতে পারেন যেমন সিঁড়ি বেয়ে ঊঠানামা করে ও নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করে।
পানি বেশি খাওয়া
আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করেন তাহলে দেহের বিপাকক্রিয়া বাধা হয়। এতে হজমপ্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই পানি বেশি বেশি পান করুন।
ঘুমে মন দেওয়া
ঘুম ঠিকমতো না হলে হু হু করে ওজন বেড়ে যাবে। ‘জার্নাল অব হেলথ গবেষণা অনুযায়ী, যারা রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান, তাদের শরীরে চর্বি জমে না।
শাকসবজি খাওয়া
ভিটামিন এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে শাক সবজি। এতে খুব সামান্য ক্যালরি ও ফ্যাট রয়েছে। এই খাবার আপনার সারাদিনের পুষ্টি পূরণ করবে।
গ্রিন টি খাওয়া
যদি আপনি ডায়েট ছাড়া ওজন কমাতে চান, তাহলে আপনাকে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
চিনিকে না বলা
চিনি কিংবা চিনি জাতীয় খাদ্য আপনা্র শরীরকে মুটিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি ব্লাড সুগার বাড়ায়। তাই প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকা থেকে চিনি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। অনেকে হয়তো একেবারে চিনি খাওয়া বাদ দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আস্তে আস্তে বাদ দিলে ভালো হয়।
ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট
ওপরে আমরা ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় আলোচনা করেছি এখন ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট সম্পর্কে আলোচনা করব। নিচে ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলঃ
১৮ বয়স বা তার কম
জীবন চক্রে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কৈশোরের সময় মানে ১৮ বয়স বা তার কম বয়সী মানুষের দেহে সব চাইতে বেশি পুষ্টিকর খাবার দরকার পড়ে। তাই ডায়েটে বা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার থাকা জরুরি। কেননা এই বয়সে দেহের হরমোনাল প্রভাব পড়ে এজন্য ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে তারা যদি অতিরিক্ত মোটা হয় তাহলে খাবার তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা অপরিহার্য।
আর এর পাশাপাশি খাবারের তালিকায় অ্যাভোকাডো, বাদাম , অলিভ অয়েল ইত্যাদি প্রতিদিন খেতে হবে। বিশেষ করে যেগুলো খাবারে প্রচূর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে সেগুলো খাবার বেশি করে দরকার। অন্যদিকে জাঙ্ক ফুড, স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৩০ বয়স বা তার কম
৩০ বয়স বা তার কম বয়সের ক্ষেত্র জন্য ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সম্মদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা গর্ভবতী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং আয়রন রাখতে হবে। এছাড়াও এর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আপনাকে ভিটামিন ডি, বি ১২, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক এসিড যোগ করতে হবে।
৫০ বয়স বা তার কম
৫০ বয়স বা তার কম বয়সী মানুষের দেহে তুলনামূলক বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এমতবস্থায় দেহে লোহার পরিমাণ কমে যায় এজন্য এ সময়ে ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখা প্রয়োজন। যেমন খাদ্য তালিকায় আপনি যদি কোকো, গ্রিন টি বেরি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে পারেন তাহলে বেশ ভালো ফলাফল পাবেন। তাছাড়া অনেকে ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায় তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন রাখা প্রয়োজন।
প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
প্রতিদিন ১ কেজি করে ওজন কমাতে গেলে আপনাকে বেশ কায়িক পরিশ্রম ক্রতে হবে। যেটা হয়ত সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে প্রতিদিন ১ কেজি ওজন করা কখনই সম্ভব নয়। মিনিমাম ১ সপ্তাহ তো লাগবেই। তবে আপনি চাইলে নিয়মিত কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন না কমলেও কিছুটা ওজন কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে ৮ কিমি হাটতে হবে।
- প্রতিদিন ১ ঘন্টা সাইকেল চালাতে হবে।
- ভারী কিছু উত্তোলন করার মত নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ।
- প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেস্তা বাদাম, অলিভ অয়েল, এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল শসা, গ্রিন টি, ব্ল্যাক কফি, পেস্তা বাদাম, অলিভ অয়েল, এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
- প্রথম দিন থেকেই আপনাকে সকালের নাস্তা খুব দেরিতে খেতে হবে। আর সকালের নাস্তাতে ডিম, সবজি, সালাদ পরিমাণ মত খেতে হবে।
- বিশেষ করে আপনাকে প্রচূর পরিমাণে পরিশ্রম ক্রতে হবে তাহলেই প্রতিদিন ১ কঞ্জি না হলেও ৩০০/৪০০ গ্রাম ওজন কমানো সম্ভব।
20 কেজি ওজন কমানোর উপায়
20 কেজি ওজন কমানোর উপায় একটি ডায়েট চার্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। আপনি যদি আপনার দেহের ওজন ১০ থেকে ২০ কেজি কমাতে চান তাহলে নিম্নোক্ত নিয়ম পালনের সাথে ডায়েট চার্টটি অনুসরণ করতে হবে। এতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ গ্রামের মতো ক্যালোরি থাকবে।
সকালের নাস্তা (সকাল ৭টা)
- ওটমিল: ১ কাপ ওটমিল (পানি দিয়ে রান্না করা)
- বাদাম: ৫-১০ টি বাদাম (যেমন: কাজু বাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তা ইত্যাদি।)
- চা: ১ কাপ চা (চিনি ছাড়া)
মধ্যবর্তী নাস্তা ( বেলা ১০টা)
- দই: ১ কাপ দই
- ফল: যেকোনো ফল খেলে পারেন (যেমন: আপেল, বেদেনা, বেরি ইত্যাদি)
দুপুরের খাবার ( দুপুর ১টা)
- ভাত: ১ কাপ লাল ভাত/বাদামী ভাত
- মাছ/মাংস: ১০০ – ১৫০ গ্রাম মাছ/মাংস ( মুরগির বুকের মাংস, কম তেলযুক্ত মাছ)
- সবজি: ১ প্লেট সবজি ( শাক, লাউ, ব্রকলি ইত্যাদি)
- ডাল: ১ কাপ ডাল
- সালাদ: ১ কাপ সালাদ (যেমন: টমেটো,শসা, পাতা কপি, বাধাকপি ইত্যাদি।)
বিকেলের নাস্তা ( বিকাল ৪টা):
- মুড়ি: ১ মুঠো মুড়ি
- ছানা: ৫০ গ্রাম ছানা
- ফল: ১/২ কাপ ফল (যেমন: আপেল, বেরি ইত্যাদি।)
রাতের খাবার ( রাত ৮ টা)
- রুটি: ২/৩ টি আটার রুটি
- সবজি: ১ প্লেট সবজি (পালং শাক, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স ইত্যাদি।)
- ডাল: ১ কাপ ডাল
- মাছ/ডিম: ১৫০ গ্রাম মাছ/ডিম (কম তেলযুক্ত মাছ)
- সালাদ: ১ কাপ সালাদ (শসা, টমেটো, পাতা কপি ইত্যাদি।)
রাতে ঘুমানোর আগে ( রাত ১০টা)
- দুধ: ১ গ্লাস গরম দুধ (চিনি ছাড়া)
- পানি: প্রতিদিন অন্তত ২/৩ লিটার পানি পান করুন।
এই ডায়েট চার্ট ছাড়াও, ওজন কমানোর জন্য আপনাকে জরুরি কিছু টিপসচ অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখবেন শুধু ডায়েট করলেই ওজন কমবে না বরং আপনাকে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমোন: প্রতিদিন আপয়ানাকে অন্তত ৬/৭ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
মানসিক চাপ কমানো: যোগ, ধ্যান, বা গভীর শ্বাস নিন।
ভাত খেয়ে ওজন কমানোর উপায়
প্রতিটা বাঙালির ভাত হচ্ছে প্রধান খাদ্য। তাই খাদ্য তালিকয় ভাত বাদ দেয়া কঠিন। তবে আপনি চাইলে ভাত খাওয়ার পরিমাণটা কমিয়ে দিতে পারেন।আপনি যদি ভাতের মার ফেকে দিয়ে ভাত খেতে পারেন তাহলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ ভুমিকা রাখবে। তবে পুষ্টিবিদরা এর পাশাপাশি ফ্রাইড রাইস থেকে শুরু করে, খিচুড়ি, কাচ্চি, বিরিয়ানি ইত্যাদি এগুলো খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
লেখকের শেষ মতামত
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আমরা আপনাদের মাঝে বেশ কয়েকটি সঠিক পরামর্শ এবং তথ্য প্রদান করলাম। এছাড়াও আপনি স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চান, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। অথবা পরামর্শের জন্য চাইলে সরাসরি যোগাযোগ পেইজ থেকে নাম্বার কালেক্ট করে যোগাযোগ করতে পারেন। এতক্ষণ ধরে মূল্যবান সময়টুকু দিয়ে কাটিং টু ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।