আপনি কি আকাইদ শব্দের অর্থ কি তা জানতে চাচ্ছেন? ঈমানের যেগুলো মৌলিক বিষয় রয়েছে তার মধ্যে একটি আকাইদ অন্যতম। সঠিক আকিদা ব্যতিত নিজেকে কখনো মুমিন হিসেবে দাবি করা যায় না। মহান আল্লাহকে মনে প্রানে সত্তা হিসেবে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় হচ্ছে আকিদার মূল বৈশিষ্ট।
মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসুলগণ পাঠিয়েছেন, আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন, জান্নাত – জাহান্নাম ও পরকাল বানিয়েছেন। এসকল বিষয়ের উপরে বিশ্বাস রাখাটাই হল আকিদা। আকাইদের বিষয়ের প্রতি সন্দেহ পোষণ করলে সেটা কুফুরী হিসেবে বিবেচিত হবে। আকাইদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী অন্যান্য উৎস থেকে জ্ঞানার্জন করা জরুরি।
আকাইদ প্রতিটা মুসলীম জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মূলত এজন্যই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আকাইদ সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তো আপনি যদি আকাইদ শব্দের অর্থ কি ও আকাইদ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি একটু গুরুত্ব সহকাড়ে পড়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্যগুলি জেনে নিন।
উপস্থাপনা – আকাইদ
আকাইদের বিষয়াবলিতে বিশ্বাস স্থাপন করার গুরুত্ব অপরসীম। আকাইদের তাৎপর্যের কথা কুরআন ও হাদিসে নানান ভাবে বলা হয়েছে। আকাইদের মৌলিক বিষয়গুলোকে কোন ব্যক্তি বিশ্বাস অর্জন না করে তাহলে সে ব্যক্তি কখনই মুসল্মান হতে পারে না।
মুসলমান হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে আকাইদ এর যেগুলো মৌলিক বিষয় রয়েছে সেগুলোর উপর ঈমান নিয়ে আসা। ঈমানে মুফাসসাল – এ এই আকাইদের বিষয়গুলোকে অতি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে আকাইদ শব্দের অর্থ কি তা জানবো।
আকাইদ শব্দের অর্থ কি
আকাইদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পূর্বে সবার প্রথমে আকাইদ শব্দের শাব্দিক অর্থ আসলে কি। সেটা জেনে নেওয়াটা জরুরি। আকাইদ শব্দটি মূলত আরবী ভাষা থেকে এসেছে। আকাইদ শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস, ধর্মীয় বিশ্বাস, মজবুত বিশ্বাস, বিশ্বাসমালা ইত্যাদি। আর এই আকাইদ মানেই হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। আকাইদ যদ পরিশুদ্ধ না হয় তাহলে ইসলামের অন্যান্য দিক শুদ্ধ হবে না।
আকাইদ শব্দের বহুবচন কি
আকাইদ শব্দটি সাধারনত বহুবচন। আর আকাইদ শব্দের একবচন শব্দ হচ্ছে আকিদা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আকাইদ শব্দের অর্থ তো জেনে নিয়েছি। তো আকিদা অর্থ কি? চলুন এই বিষয়েও জেনে নেওয়া যাক।
আকিদা অর্থ কি
আরবি ভাষায় আভিধানিকভাবে আকিদা শব্দটির অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস। মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসুলগণ পাঠিয়েছেন, আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন, জান্নাত – জাহান্নাম ও পরকাল বানিয়েছেন। এসকল বিষয়ের উপরে বিশ্বাস রাখাটাই হল আকিদা।
আকাইদ কাকে বলে
আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে, মানুষ যে বিশ্বাসের মাধ্যমে তাদের চিন্তা ও কাজ কর্ম সম্পাদন করে তাকে আকাইদ বলা হয়। সাধারনত আকাইদ বলতে মহান আল্লাহ্, নবী রাসূলগণ, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব সমূহ, জান্নাত-জাহান্নাম, পরকাল ইত্যাদির প্রতি মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করাকে বোঝায়।
📌 আরো পড়ুন 👇
সহজাভাষায় বললে ইসলামের যেগুলো মৌলিক বিষয় রয়েছে সেগুলির উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাকেই আকাইদ বলা হয়। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলির মধ্যে কেউ যদি কোন একটিতে অবিশ্বাস করে, তাহলে সেই ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না। তাই বলা যায় আকাইদ হচ্ছে ইসলামের প্রধান ভিত্তি।
আকাইদ এর পরিচয়
একজন মানুষ আকাইদের মাধ্যমেই ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। আকাইদ এর উপরে বিশ্বাস করা ব্যতিত কোনো ভাবেই ইসলামে প্রবেশ করা পসিবল না। মহান আল্লাহ তা’আলা সকল বিধি বিধান ও নিয়মনীতি পালন করার মাধ্যমে পরিচালনা করাকে আকাইদ বলে। আকাইদ এর সাধারনত দুইটি দিক রয়েছে যেমন –
- প্রয়োগিক
- বিশ্বাস গত
প্রয়োগিক দিক হচ্ছে মূলত আকাইদ এর মধ্যে অন্যতম একটি গ্রুরুত্বপূর্ণ দিক। মূলত নিম্নলিখিত বিষয় গুলির মাধ্যমে আমাদের ইসলামিক জীবন পরিচালনা করা আকাইদের প্রয়োগিক দিক কাজ করে যেমন –
- সামর্থ থাকলে অবশ্যই হজ্জ করা।
- সামর্থ থাকলে যথাসময়ে যাকাত প্রদান করা।
- মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখা
- কালেমা কে স্বীকৃতি প্রদান করা।
- ফরজ ইবাদতগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে পালণ করা যেমন – নামাজ, রোজা ইত্যাদি।
উপরের উল্লিখিত বিষয় গুলি মূলত আকাইদের প্রয়োগিক দিক। যেগুলো আমাদের সকল মুসলীম জাতিকে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে এর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে তা পালন করতে হবে।
📌 আরো পড়ুন 👇
অপরদিকে বিশ্বাসগত দিক হচ্ছে আকাইদের অন্য আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কেউ যদি মনে প্রানে এগুলো বিশ্বাস না করে, তাহলে তার আকিদা সহিহ হবে না। আর দোয়া কবুলের জন্য অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে সঠিক আকিদা মোতাবেক জীবন যাপন করা। বিশ্বাসগত যে বিষয় রয়েছে তা নিম্নরূপঃ
- মহান আল্লাহ তায়ালা ও সকল নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- পরকাল সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সকল আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- মহান আল্লাহ তা’আলার ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস আনা।
- জান্নাত-জাহান্নাম ও পরকাল সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা।
আকিদার এই ২ টি দিক যদি ভালো মত মানতে পারেন তাহলে সেটা সহিহ আকিদা হবে। মোট কথা হচ্ছে – মহান আল্লাহ তা’আলার সমস্ত কিছুর উপরে আমাদের প্রতিটা মুসলমানকে মনে প্রানে বিশ্বাস রাখতে হবে।
আকাইদের মৌলিক বিষয়সমূহ কি কি?
আকাইদের মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে মূলত মহান আল্লাহ, নবী-রাসুল, ফেরেশতাগণ, আসমানি কিতাব, আখিরাত ও তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের নাম। কোন ব্যক্তি যদি এই বিষয়গুলোর যেকোন একটিকে অস্বীকার করেন তাহলে সেই ব্যক্তি আর মুসলমান থাকে না।
আকাইদ এর ৬ টি মৌলিক বিষয় রয়েছে। এগুলোর প্রতি কেউ যদি বিশ্বাস স্থাপন না আনেন তাহলে সে মুসলমান হতে পারবে না। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যথাক্রমে ঈমান হারিয়ে ফেলবে। এজন্য আকাইদের এই ৬টি বিষয়ের উপর আমাদের সকলকেই বিশ্বাস আনাটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা নিম্নে আকাইদের এই ৬টি মূল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
১. আল্লাহর উপর বিশ্বাস
আকাইদের প্রধান বিষয় হচ্ছে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং এই বিশ্বাস সবসময় ধরে রাখা। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় তিনি ব্যতিত আর কোন শরীক নেই। তিনিই সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও পরম দয়ালু। এগুলির উপর কারো সন্দেহ থাকলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
২. ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস
মহান আল্লাহ তা’য়ালা ফেরেশতাগণদের সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতাদের বিভিন্ন কাজ আছে, যেমন প্রতিটা মানুষের জীবন মৃত্যুর হিসাব করা, ভালো-খারাপ কাজের হিসাব করা, ঝড়-বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদ। আর ফেরেশতাদের উপর এই বিশ্বাস করাটা আকিদার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।
৩. নবী-রাসুলদের উপর বিশ্বাস
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য বিভিন্ন সময় নবী-রাসূলদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) হচ্ছেন সারা পৃথিবীর ইসলামের সর্বশেষ নবী। তার শিক্ষায় অনুসরণ ও অনুগত হতে হবে।
৪. আসমানি কিতাবের উপর বিশ্বাস
মহান আল্লাহ তামান দুনিয়ায় অসংখ্য নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন। বিভিন্ন নবী-রাসূলগণের উপর তিনি আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। তিনি আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন সর্বমোট ১০৪ খানা। জাবুর, ইঞ্জিল, তাওরাত এবং কুরআন মাজীদ এই ৪ টি চারটি প্রধান আসমানি কিতাব।
৫. পরকালের উপর বিশ্বাস
মৃত্যুর পর প্রতিটা মানব জাতীকে আবার জীবিত করা হবে। এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের ভালো-মন্দ কাজের বিচার করবেন। ইহকালে যারা ভাল কাজ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত দান করবেন। এবং যারা মন্দ কাজ করছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধি-বিধান মেনে চলেননি তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি আছে।
৬. তাকদীরের উপর বিশ্বাস
মহান আল্লাহ তা’আলা নিয়ন্ত্রণকারী শুধুমাত্র তিনিই সব নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি ভালো থেকে শুরু করে খারাপ সবকিছু নির্ধারণ করে থাকেন। একজন মুমিন ব্যক্তি সবসময় বিশ্বাস করেন যে মহান আল্লাহ যা করেন, তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন।
উপরের উল্লিখিত আকাইদের এই ৬টি বিষয় প্রতিটা মুসলীম জাতির ঈমানকে দৃঢ় করে এবং জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে আমল করা প্রতিটা মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আকাইদের গুরুত্ব
ইসলামিক জীবনের আকিদা হচ্ছে মূলত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিক আকিদা প্রতিতা মানুষের জীবনকে সুন্দরময় করে তুলতে সহায়তা করে। এজন্য আমাদের সকলেরই উচিত আকিদা সম্পর্কে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করা এবং এর পাশাপাশি তা মেনে চলা। কারন যারা সহিহভাবে আকিদা পালণ করেন তারা আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
মহান আল্লাহর নিয়ামত যথাক্রমে ভোগ করতে পারবেন। এছারা সবসময় বিপদে আপদে আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে জীবন পরিচালনা করাই উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিহভাবে আকিদা পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন।
আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য
আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- ১. আকাইদের মৌলিক বিষয় সর্বমোট ৬ টি।
- ২. ইসলামের মৌলিক বিষয়ই হচ্ছে আকাইদ।
- ৩. ঈমানের মূল ভিত্তি হলো আকাইদ।
- ৪. আকাইদের প্রধান বিষয় ’আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়’।
- ৫. আকাইদ এ বিশ্বাস করা মানে নিজেকে কল্যাণের পথে প্রতিষ্ঠিত করা।
- ৬. আকাইদ হচ্ছে বিশ্বাস স্থাপনের সবথেকে উচ্চ আসন।
- ৭. তকদিরের ভালো এবং খারাপকে মেনে নেওয়া।
- ৮. আকাইদে যারা অবিশ্বাস করেন তারা সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
- ৯. যার আকাইদ এর প্রতি কোন বিশ্বাস নাই বা এ বিষয়ে যাদের সন্দেহ রয়েছে তার ঈমান নাই।
- ১০. মৃত্যুর পর আমাদের আবারও জীবিত কর পরে এবং এবং আমাদের কৃতকর্মের হিসাব নিয়ে ফল লাভ করবো এটাও আকাইদ।
আকাইদ সম্পর্কে লেখকের মতামত
আকাইদ শব্দের অর্থ কি সেই বিষয়ে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। মানুষ তার জীবনে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যা কিছু সঠিক মনে করে সেটাই হলো আকিদা। তবে সেটা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ও তার নবী রাসূল এবং তার নাজিল কৃত সকল কিতাব সমূহের উপরে হতে হবে।
আমরা ইতিমধ্যে আকাইদ সম্পর্কে নানান ধরণের টপিক জেনে নিয়েছি। যেমন আকাইদ শব্দের অর্থ কি, আকাইদের মৌলিক বিষয়সমূহ কি কি, আকাইদ এর পরিচয়, আকাইদ কাকে বলে, আকাইদ এর গুরুত্ব ইত্যাদি। এই পোষ্টে কোন ভুল থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
পরিশেষে বলব মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিহভাবে আকিদা পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন। আপনার যদি আকাইদ নিয়ে কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্ন কিংবা মতামতের উত্তর দেওয়ার অবশ্যই চেষ্টা করবো। আকাইদ শব্দের অর্থ কি সম্পর্কিত এই পোষ্টিটি এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।