আখলাক শব্দের অর্থ কি – তা জানতে চাচ্ছেন? আখলাক হচ্ছে মূলত আরবি ভাষা থেকে এসেছে। এর দ্বারা মানুষের স্বভাব-চরিত্র ও গুণাবলী বিবেচনা করা হয়। যেহেতু আখলাক এর অর্থ চরিত্র সেহেতু এই চরিত্র কিন্তু ভালো ও খারাপ উভয়ই হতে পারে। এবং এই স্বভাব, চরিত্র এবং গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে আখলাক এর বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। যেগুলো বিষয়ে আমাদের প্রতিটা মুসলমানের জ্ঞান রাখতে হবে।
কেননা আপনার আমার সকলেরই আখলাক ভালো করতে হবে এতে আমাদের ইহকাল ও পরকালে সম্মান, মর্যাদার পাশাপাশি মহান আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা অর্জন করতে পারবো। এজন্য আমাদেরকে এমন ভাবে আখলাম অর্জন করতে হবে যাতে সেটা ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবন সুন্দর বয়ে আনে।
উপস্থাপনা – আখলাক
আখলাক বা চরিত্র মানুষের জীবনের সার্বাধিক বিষয় গুলোকে তুলে ধরে। আখলাক এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে চরিত্র মানে তার ভেতরে খারাপ গুন রয়েছে না ভালো গুনাগুন রয়েছে তা বিচার করা হয়। মানুষের জীবনে এই আখলাক বলা যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানুষের চরিত্র দ্বারাই একজন ভালো বা খারাপ মানুষের গুনাবলি চেনা যায় সবচেয়ে বেশি।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো আখলাক শব্দের অর্থ কি, আখলাকে হামিদা কি, আখলাকে হামিদার গুরুত্ব। আপনি যদি এই আখলাক বা চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে যাবতীয় তথ্যাদি জানতে চান তাহলে আজকের এই পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন। আসুন কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। আখলাক শব্দের অর্থ কি তা সংক্ষেপে জেনে নিব।
আখলাক শব্দের অর্থ কি
আভিধানিক অর্থে বলতে গেলে আখলাক মূলত আরবি শব্দ। আখলাক শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বভাব, চরিত্র এবং গুণাগুণ। কিন্তু এই আখলাক এর অর্থ শুধুমাত্র এতটুকুই নয়। বরং ইসলামিক শরিয়ত ভিত্তিক মোতাবেক এটি এমন চরিত্র যা সমাজে গ্রহণযোগ্য। এর পাশাপাশি মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে প্রশংসনীয়।
আখলাক কাকে বলে
আখলাক হচ্ছে মূলত একজন মানুষের চরিত্র, তার কর্ম এবং তার চিন্তাভাবনা মানসিকতা সবকিছু ভালো অথবা খারাপ মিলিয়ে আখলাক বলা হয়। তবে আখলাক বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। প্রকারভেদ মোতাবেক আপনার আখলাক ভালো অথবা খারাপ হিসাবে গন্য করা হবে।
স্বাভাবিক ভাবে আমরা আমাদের স্বভাবকে স্বভাব হিসাবেই চিনি। তবে এই স্বভাব ভালো অথবা মন্দ উভয়ই হতে পারে। তবে এই চরিত্র অনেক সময় পরিবর্তনও হতে পারে। আখলাক আপনার নিজের জন্য পরিবর্তন হতে পারে। আখলাক সম্পন্নটাই নিজের উপর নির্ভরশীল। কেননা একজন মানুষ তার ব্যক্তিগতভাবে চরিত্র নিজে থেকেই ভালো বা খারাপ পথে পরিচালনা করতে পারেন।
আমরা হয়তো অনেকেই চিন্তা করি যে শুধু নৈতিক আচরনকেই আখলাক বলে। কিন্তু এই কথাটি আসলে গ্রহণযোগ্য নয়। এর কারণ, একটা মানুষের ব্যক্তিগত নৈতিক আচরণ দেখে আখলাক বলা যাবে না। কেননা আখলাকের সাথে জড়িত আছে ভালো ও খারাপ চরিত্র। আর সেটা প্রকারভেদ অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়।
আখলাক কত প্রকার ও কি কি
আখলাক ভালো ও খারাপ এই ২ টা দিকের উপর ভিত্তি করে আখলাকের পরিবর্তন হয়। এই দুইটা দিকের উপর বিবেচনা করে আখলাকের প্রকারভেদ রয়েছে। যে প্রকারভেদ গুলা ভালো এবং মন্দ উভয় এর উপর বিবেচনা করা হয়। ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক ভালো আখলাক এক নামে পরিচিত এবং খারাপ আখলাক কে আরেক নামে পরিচিত। আখলাক মূলত ২ প্রকার। যথা :
- আখলাকে হামিদাহ ( ভালো গুণাবলি)
- আখলাকে যামিমাহ ( মন্দ গুণাবলি)
আখলাকে হামিদাহ কাকে বলে
আখলাকের একটি শাখা হচ্ছে আখলাকে হামিদাহ। আখালাকে হামিদাহ অর্থ হল ভালো কিংবা প্রশংসনীয় গুণাবলি। মানুষ পৃথিবীতে যতদিন বেচে থাকে ততদিন পর্যন্ত যতরকম্ভাবে দিনের পর দিন ভালো কাজ করে এবং প্রতিটা মানব জাতীর সাথে উত্তম আচরণ করে এসবই হচ্ছে মূলত আখলাকে হামিদাহ। যেমন :
- পরোপকারীতা,
- আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করা,
- আমানত রক্ষা করা,
- কেউ যদি অন্যায় করে, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া ইত্যাদি।
মূলত উপরের উল্লিখিত এগুলাকেই আখলাকে হামিদা বলা হয়।
আখলাকে যামিমাহ কাকে বলে
আখলাকের আরও একটি শাখা হচ্ছে আখলাকে যামিমাহ। আখলাকে যামিমাহ এর বাংলা অর্থ হল মন্দ বা খারাপ কাজ। যেটা আল্লাহ ও তার রাসূল অপছন্দ করেন।
- মানুষের সাথে খারাপ আচারণ করা।
- মানুষ কে কষ্ট দেওয়া।
- কথা দিয়ে কথা না রাখা।
- কারো বিপদে এগিয়ে না যাওয়া,
- কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে ক্ষমা না করা ইত্যাদি।
মূলত উপরের উল্লিখিত এগুলোকেই আখলাকে যামিমাহ বলা হয়।
আখলাকে হামিদার গুরুত্ব
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের মাধ্যমে যেসব আচার-আচরণ, চালচলন এবং স্বভাবের প্রকাশ পায়, সেগুলোকেই আখলাকে হামিদাহ বলা হয়। তাই বলা যায় আমাদের সকলের জীবনে আখলাকে হামিদা এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রত্যেক এর জীবনের সুখ-শান্তি অবশ্যই আচরণের উপর নির্ভরশীল।
📌আরো পড়ুন 👇
আর মূলত ভালো আচরণ এর মাধ্যমেই একজন মানুষের উত্তম চরিত্র গড়ে উঠে। এমনকি পরকালের সুখ-দুঃখও আখলাকে হামিদা এর উপর নির্ভর করে। যার চরিত্র যত বেশি সুন্দর হবে, সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দিনের পর দিন ততই প্রিয় হয়ে ঊঠবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যার চরিত্র উত্তম।
আখলাকে হামিদা অর্জনের উপায়
মহান আল্লাহ তা’আলার হুকুম পালন করে আখলাকে হামিদা অর্জন করা যায়। আল্লাহ আমাদের যেসব কাজ করতে আদ্দেশ দিয়েছেন সেগুলা সঠিক ভাবে করা ও যেসব কাজ করতে একেবারে নিষেধ করেছেন সেগুলো কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থেকে উত্তম চরিত্রের অধিকারি হয়ে এই আখলাকে হামিদাহ অর্জন করতে পারবো। সকল ধরণের সৎ কাজের মাধ্যমে আখলাকে হামিদা অর্জন করা উত্তম।
আখলাকে হামিদা অর্জনের উপায়গুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সত্যবাদী হওয়া
- মাতা পিতার প্রতি সদাচার
- আত্মীয় স্বজনদের প্রতি সদাচরণ
- প্রতিবেশির প্রতি সদাচরণ
- বড়দের প্রতি সম্মান ও ছোটদের প্রতি স্নেহ
- ছোটদের প্রতি বড় দের দ্বায়িত্ব
- ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি স্বদাচার
আখলাকে হামিদাহ এর বৈশিষ্ট
উত্তম বা আচার আচরণের অধিকারি ব্যাক্তির কিছু বৈশিষ্ট নিম্নে উল্লেখ করা –
- আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি আচরণ – ইহকালে আল্লাহর বিধি বিধান ও রাসূলগণ এর আদেশ ও উপদেশ মোতাবেক জীবন যাপন করা।
- নিজের সাথে সদাচরণ – নিজের সাথে সদ্যবহার করতে হবে। যেমন – নিজে অসুস্থ হলে মেডিসিন সেবন করতে হবে।
- অন্যের সাথে সদাচরণ – মানুষকে মিথ্যা কথা না বলা, অন্য কাউকে কষ্ট না দেয়া।
- পশুপাখি – জীব জন্তু বা পশুপাখির সাথে উত্তম ব্যবহার করা।
আখলাকে যামিমাহ বর্জনের উপায়
আখলাকে যামিমাহ এর অর্থ হচ্ছে মন্দ বা খারাপ চরিত্র। যে চরিত্র আসলে প্রতিটা মানবজাতিকে কষ্ট দেয়। নিজেকে ভালো হতে দেয় না এবং অন্যের কাছেও ভালো হতে দেয় না। সকলেই তাকে ঘৃণা করে।
আপনি যদি নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে আখলাকে যামিমাহ বর্জন করতে হবে। আমরা বিভিন্ন ভাবে বা নানান উপায়ে এই খারাপ চরিত্র বর্জন করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে, তা নিম্নে তুলে ধরা নিচে হলো –
- মিথ্যা বলা বন্ধ করা
- প্রতারণা থেকে বিরত থাকা
- গিবত করা বন্ধ করা
- গালি ও খারাপ কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
আখলাকে যামিমাহ এর বৈশিষ্ট্য
খারাপ চরিত্রের মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
- মিথ্যা বলা: আখলাকে যামিমাহর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবসময় মিথ্যা বলা। এটি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে এবং সমাজে তার সম্মান থাকে না।
- প্রতারণা করা: প্রতারণা করাটা খুবই খারাপ কাজ। প্রতারণাকারীদের প্রতি ভরসা কমে যায়। এবং সমাজ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে।
- হিংসা: হিংসা মানবজাতির মনকে নষ্ট বিনষ্ট করে দেয় যার ফলে অন্যায়ের পথে অগ্রসর হতে হয়। যারা হিংসা করে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
- লোভ: লোভী মানুষেরা নিকৃষ্ট কাজ করতে কখনই ২ বার ভাবে না। সমাজে লোভী মানুষকে নিকৃষ্ট হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়।
- গীবত : ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা করা মহাপাপ। যারা গীবত করেন তারা শুধু অন্যের ত্রুটি খুজে এবং সম্মান নষ্ট করে।
- অহংকার: যারা অহংকারী তারা অন্যদের চেয়ে নিজেকে সবসময় উঁচু মনে করে এবং অন্যদেরকে সবসময় ছোট মনে দেখে। আর অহংকারীদের কেউ পছন্দ করেন না।
আখলাক এর গুরুত্ব
ইসলামে আখলাকের গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে আখলাকে হামিদা বা ভালো চরিত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা ভালো চরিত্রের মানুষকে আল্লাহ তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।
নিম্নে আখলাক এর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
- ব্যক্তিগত উন্নতি: আখলাক মানজাতিকে আত্মশুদ্ধি ও সঠিক দিকে পরিচালনা করে। যার ফলে অতি সহজে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
- মানবিক মূল্যবোধ: আখলাক মানজাতিকে মানবিক মূল্যবোধ জানতে ও বুঝতে সহায়তা করে। ও অন্যের প্রতি দয়াবান এবং ক্ষমাশীল হতে সহায়তা করে।
- সামাজিক ভারসাম্য: আখলাক সমাজকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে অনেক ভূমিকা পালন করে। এটি সামজের প্রতিটা মানজাতির মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
- ধর্মীয় ভিত্তি: ধর্মীয় জীবনে আখলাক খুবই জরুরি অঙ্গ। একজন মানুষ ইসলামিক ভাবে জীবনযাপন করতে আখলাক অনেক বেশি সহায়তা করে।
আখলাক এর প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান এই আখলাকের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আপনি যদি একটু খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন আমাদের আশেপাশের সমাজে দিনের পরে দিন অসামাজিক কাজ কর্ম বেড়ে চলছে। যারা এ অসামাজিক কাজ কর্মে লীপ্ত রয়েছে মূলত তাদের কারণে আমাদের সমাজ আজ ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
📌আরো পড়ুন 👇
আমাদের এই সমাজ কে রক্ষা করার জন্য, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং দুনিয়ার জীবন ও আখিরাত এর জীবনের কথা চিন্তা করে সৎ পথে বেচে থাকার জন্য বলা যায় আখলাকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
আখলাক সম্পর্কে লেখকের মতামত
আখলাক শব্দের অর্থ কি সেই বিষয়ে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। মানুষের মাঝে খারাপ ভালো দুই চরিত্র বিদ্যমান থাকে। তবে মানুষ নিজে চাইলেই সে তার চরিত্র বা আখলাক পরিবর্তন করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে আখলাক সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের তথ্যাদি জেনে নিয়েছি।
যেমন আখলাক শব্দের অর্থ কি, আখলাক কাকে বলে, আখলাকে হামিদার গুরুত্ব, আখলাক কত প্রকার ও কি কি, আখলাক এর গুরুত্ব ইত্যাদি। এই পোষ্টে কোন ভুল হয়ে থাকলে তা কমেন্ট বক্সে আমাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পরিশেষে বলব মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আখলাকে যামিমাহ থেকে বেচে থাকার এবং আখলাকে হামিমাহ সহিহভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন।
আপনার যদি আখলাক নিয়ে কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা আপনার প্রশ্ন কিংবা মতামতের উত্তর দেওয়ার অবশ্যই চেষ্টা করবো। আখলাকে শব্দের অর্থ কি সম্পর্কিত এই পোষ্টিটি এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।