প্রিয় পাঠক, আপনি কি কার সাথে বিয়ে হবে জানার আমল ও তাড়াতাড়ি বিয়ে হবার আমল জানতে চাচ্ছেন তাহলে বিয়ে নিয়ে এসব বিষয় জানতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। কারন আজকে এই আর্টিকেলে কার সাথে বিয়ে হবে জানার আমল ও তাড়াতাড়ি বিয়ে হবার আমলসহ এই বিয়ের আমল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো।
বিয়ে হচ্ছে মূলত একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধন এসেছে সাধারনত জান্নাত থেকে। আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য ছেলে-মেয়ে আছে যাদের বয়স দিন দিন বাড়তেই আছে তবুও বিয়ে হচ্ছে না। এ নিয়ে অভিভাবকরা বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে রয়েছে। বিয়ে হওয়ার লক্ষণ গুলো জানতে আমরা অনেকেই হয়তো গুগলে সার্চ করি। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে প্রথমে বিয়ে হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বিয়ে হওয়ার লক্ষণ
বিয়ের মাধ্যমেই মূলত একটি পরিবার পরিপূর্ণতা পায়। তাই আমাদের অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তান সন্তনিদের সঠিক সময়ে বিয়ে দেওয়া। কেননা আপনি যদি আপনার সন্তানদের সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে না দেন, তাহলে দেখবেন এক সময়ে যেয়ে তারা বিভিন্ন পাপকর্মে জড়িয়ে যাবে।
📌আরো পড়ুন 👇
আর আপনারা সেই পাপের ভাগিদার হবেন। প্রতিটি মানুষেরই বিয়ে নিয়ে অনেক ধরনের কামনা বাসনা থাকে। কবে আমার বিয়ে হবে? বিয়ের আগে ও পরে হবে? এছাড়াও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের চিন্তাভাবনা করে থাকে। তবে বিয়ে হওয়ার কিছু লক্ষণ ও পরিলক্ষিত হয়।
বিয়ে হওয়ার লক্ষণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো –👇
- বিয়ে হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বুক ধড়ফড় করা।
- বিয়ের আগে প্রতিটি বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে আলাদাভাবে চিন্তা শুরু হবে।
- বিয়ে হওয়ার আগ মুহূর্তে জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য বিয়ে করা এটি বারংবার মনে হবে।
- বিয়ে নিয়ে আপনি অনেক দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যাবেন।
- বিয়ে নিয়ে বাড়িতে প্রচূর ঝামেলা হতে থাকবে।
- পরিবারের প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে আলাদা অনুভূতি কাজ করবে।
- বিবাহিত মানুষ বা আপনার বিবাহিত বন্ধুদের দেখলে মনে হবে, আপনিও যেন তাদের দলের একজন হতে যাচ্ছেন।
- অনেক সময় টেলিভিশন দেখার সময় রোমান্টিক মমেন্ট দেখে আপনি নিজেকে খুঁজতে শুরু করবেন।
- মনের অজান্তেই যাকে আপনি কখনো দেখেননি, তাকে নিয়ে আপনি কল্পনার মধ্যে থাকবেন।
কার সাথে বিয়ে হবে জানার আমল
আমরা মানুষ গায়েব সম্পর্কে কেউই জানি না। সুতরাং আপনার কার সাথে বিয়ে হবে? আপনার জীবনসঙ্গী কে হবে সেটা শুধুমাত্র মাহন আল্লাহ তা’আলা বলতে পারেন। কেননা, পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে মানুষের ভাগ্য লিখা হয়েছে। আবার যখন শিশু মায়ের গর্ভে ৪ মাস বয়স তখন ভাগ্য লিখা হয়েছে।
আপনার ভাগ্য যদি একান্ত পরিবর্তন করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে আমল হিসেবে দোয়ার আশ্রয় নিতে হবে। কেননা শুধমাত্র দোয়ার মাধ্যমে আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন। তাই সবচেয়ে উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত দোয়া করতে হবে।
তবে আপনার কাছে যদি একাধিক বিয়ের প্রস্তাব এসে থাকে, আপনি কাকে বিয়ে করলে সুখী হবেন তা যদি জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ইস্তেখারার নামাজ আদায় করতে হবে। কেননা এই ইস্তেখারা নামাজে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইস্তেখারার নামাজ কি?
এই নামাজ সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই অবগত নই। ইস্তেখারার নামাজ যদি না জানেন তাহলে ইস্তেখারার নামাজ লিখে ইউটিউবে সার্চ করলেই অনেক বিজ্ঞ আলেম ওলামারা ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আলোচনা করেছেন।
৭ দিনে বিয়ে হওয়ার আমল
আপনারা অনেকেই ৭ দিনে বিয়ে হওয়ার আমল কী তা জানতে চান। কিন্তু এইটা বলা যাবে না যে আমল করলে আপনার বিয়ে ৭ দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। কেননা, আপনার আমল আল্লাহর দরবারে যখন কবুল হয়ে যাবে আল্লাহ তখন আপনার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবে ইনশাল্লাহ।
📌আরো পড়ুন 👇
আপনার বিয়ে না হলে থাকলে বিয়ের জন্য বেশ কিছু আমল আমল রয়েছে যেগুলো আমল নিয়মিত করলে ভালো ফল পাওয়া যম্ভব। তাহলে চলুন, নিচের অংশ থেকে সেই আমল গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
- বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
- নিজে সারাজীবনে যা পাপ কাজ করেছে তার জন্য সবসময় তওবা করুন।
- এর পাশাপাশি সমস্ত পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার লক্ষ্যে নিজেকে ভালো কাজে নিয়োজিত রাখুন।
- যেই সময়ে দোয়া বেশি কবুল হয় সেই সময় বাছাই করে বেশি বেশি দোয়া করুন।
- তাহাজ্জুতের নামাজ প্রতিদিন পড়ুন ও বেশি বেশি দোয়া করুন।
- ইস্তেখারার সালাত আদায় করুন। ইস্তেখারার সালাতে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ।
- আল্লাহকে স্মরণ করুন ইয়া হাইয়ু, ইয়া কাইয়ুম, ইয়া ফাত্তাহু, বলে দেখনে মহান আল্লাহ অবশ্যই আপনার ডাকে সাড়া দিবে।
আপনি যদি বিশ্বাসের সহিত উপরোক্ত এই আমলের হক নিয়মিত আদায় করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার মনের হাজত গুলো পূরণ হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাল্লাহ।
মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল
আমাদের সমাজে ছেলেরা যেকোন বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু আমাদের সমাজে একজন মেয়ের বয়স একটু বাড়লেই তাকে বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে দাড়ায়। এখন আমরা মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিব। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে যে আমলগুলো করলে একজন মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত মহান আল্লাহ করে দিবেন। তা জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমলগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ👇
দরুদ শরীফ পড়ুন
জীবনের যেকোন সংকট মুহুর্ত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করুন। কেননা এতে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান রয়েছে। আর এটা হতে পারে দ্রুত বিয়ে করার জন্য কার্যকরী একটি আমল।
ইস্তেগফার পড়ুন
দরুদ শরীফের পরে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে ইস্তেগফার। আমাদের পাপের কারণে অনেক কিছু আটকে থাকে। সুতরাং আপনি পাপমুক্ত হলে কল্যাণ নিকটবর্তী হতে থাকবে। তাই মেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ুন।
তাহাজ্জুত সালাত আদায় করুন
দোয়া কবুলের সবথেকে উপযুক্ত সময় হচ্ছে তাহাজ্জুতের সময় হচ্ছে মূলত দোয়া কবুলের সবথেকে অন্যতম একটি উপযুক্ত সময়। এসময় মহান আল্লাহ তা’আলা নিজ জমিনে মেনে আসেন। তাই যেসকল বোনদের বিয়ে হচ্ছে না তারা তাহাজ্জুতের সময় বেশি বেশি দোয়া করুন।
এছাড়াও প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পরে মোনাজাতের সময় এই দোয়া পড়ুন ‘হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সূরা ফোরকান : ৭৪)।
উল্লিখিত আমলগুলো বিশ্বাসের সহিত করতে থাকুন। তাহলে দেখবেন মহান আল্লাহ আপনার মনের সমস্ত চাওয়া পাওয়া গুলো দ্রুত কবুল করবেন এবং আপনার সুন্দর ও সুখী জীবন দান করবেন ইনশাল্লাহ।
উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার উপায়
আমরা সকলেই চাই যে আমার জীবনে একটা উত্তম জীবনসঙ্গী আসুক। পুরুষরা চাই উত্তম স্ত্রী এবং নারীরা চাই উত্তম স্বামী। তবে সেটা শুধু মনে মনে চাইলেই হবে না। মহান আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত চাইতে হবে। তিনি না চাইলে তা কখনই পূরন হবে না। নারী ও পুরুষকে একে অপরের জন্য সৃষ্টিকুলের শুরু থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
নারী ও পুরুষ একে অন্যকে ছাড়া কখনই একটি পরিবার সম্পূর্ন হতে পারে না। জীবনে সঠিক পথে চলতে হলে প্রয়োজন একজন উত্তম জীবনসঙ্গী। যিনি ইমানদার বা দিনদার তাকেই নিজের জীবনসঙ্গী বানাতে হবে। এবং যারা মহান আল্লাহকে ভয় করে এবং তার প্রতি আনুগত্য ও ইবাদত করে।
বিয়ে ইসলামের বেধে দেয়া একটি পরিবারের সামাজিক জীবন বিধান। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা যদি অভাবী হয়ে থাকেন, তাহলে মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দিবেন।
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী। নবী করীম রাসূল সা. বলেছেন বিয়ে করা আমার সুন্নাত। আর যেই ব্যক্তি সুন্নত পালন করেন না সে আমার দলভুক্ত হতে পারে না। তোমরা বিয়ে করো, আমি তোমাদের নিয়ে অনান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো। (ইবনে মাজাহ, ১৮৪৬)
তাই বিয়ের জন্য আমাদেরকে উত্তম জীবন সঙ্গী বেছে নিতে হবে। এক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে তোমরা নারীর মোট ৪টি জিনিস দেখে বিয়ে করো তার সম্পদ, বংশমর্যাদা, রুপ ও দীনদার দেখে। শুধুমাত্র তার রুপ দেখে বিয়ে করলে হবে না বরং সেই নারী দীনদার কিনা সেটা দেখে বিয়ে করা উত্তম।
তবে নারীরাও পুরুষুদের এসব দিক বিবেচনা করে বিয়ের পিরিতে বসবে। মূলত এটি হচ্ছে উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার উপায়। উত্তম জীবনসঙ্গী নিজে খুঁজতে হবে এবং পাশাপাশি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
বিয়ে নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
বিয়ে কখন ফরজ?
ব্যাক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে, তার আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে, বিয়ে করলে স্ত্রীর হক আদায় করতে পারবে কিন্তু বিয়ে না করালে তার চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে এমন অবস্থায় সেই ব্যক্তির বিয়ে ফরজ।
বিয়ে কখন সুন্নাহ?
ব্যাক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে, তার আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে, বিয়ে করলে স্ত্রীর হক আদায় করতে পারবে কিন্তু বিয়ে না করালে তার চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে না বা চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশংখা নেই এমন অবস্থায় সেই ব্যক্তির বিয়ে ফরজ।
বিয়ে কখন হারাম?
যে ব্যাক্তির শারীরিকভাবে অক্ষম, আর্থিক কোন ধরণের স্বচ্ছলতা নেই, বিয়ে করলে স্ত্রী যথাযথভাবে হক আদায় করতে পারবে না এমন ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা হারাম।
বিয়ে নিয়ে লেখকের মতামত
পরিশেষে বলব, আপনি যদি একজন অভিভাবক হয়ে থাকেন তাহলে বিয়ে-শাদী সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে আপনার সন্তাদের সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়াই হল উত্তম সিদ্ধান্ত। অনেক সময় দেখা যায় ছেলে-মেয়েদের বয়স বেশি বেড়ে যায় ফলে তাদের বিয়ে-শাদী হতে বিলম্ব হতে দেখা দেয়।
এই বিষয়টি আমরা অনেক অভিভাবকরাই বুঝি না। সন্তানদের নিজের পায়ের দাড়ানোর চিন্তা করি। কিন্তু আমরা এইটা চিন্তা করি না যে সঠিক সময়ে বিয়ে না হলে যুবক-যুবতীরা পাপকর্মে জড়িয়ে যাবে। দিনশেষে সেই পাপের ভাগীদার অভিভাবককেও হতে হবে।
আমরা ইতিমধ্যে কার সাথে বিয়ে হবে জানার আমল তা আলোচনা করার পাশাপাশি তাড়াতাড়ি বিয়ে হবার আমল, বিয়ে হওয়ার লক্ষন ও ৭ দিনে বিয়ে হওয়ার আমল এবং মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি বিয়ের আমল নিয়ে এসকল বিষয়ে ক্লিয়ার হয়েছেন।
বিয়ের আমল সম্পর্কিত আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের মাঝে কোন ধরণের মতামত কিংবা প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। এমন আরো তথ্যমূলক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে বা বিভিন্ন জরুরি তথ্য পেতে আমাদের এই কাটিং টু ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।