বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার 2025 – বিপিএল খেলা জনপ্রিয় কেন

আপনি কি বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে চাচ্ছেন? ক্রিকেটের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টি (T-20) খুব বেশি পুরাতন নয়। মূলত আমাদের প্রতিটা ক্রিকেট লাভার বা দর্শককে বিনোদন দিতে এবং ক্রিকেটকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলতে এই ফরম্যাটের উত্থান হয়। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো বিশ ওভারের জনপ্রিয়তা দেখে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হচ্ছে টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃক ২০১২ সালে এই বিপিএলের প্রতিষ্ঠা হয়। এটি দেশের ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটায় যা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের নিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে বাংলাদেশে বিপিএল খেলা এতো জনপ্রিয় কেন? বা বিপিএল টুর্নামেন্ট কিভাবে এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূলত আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বাংলাদেশে বিপিএল খেলা জনপ্রিয় কেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো

বিপিএল কি

বিপিএল এর পূর্ণরূপ হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যাকে আমরা সংক্ষেপে বিপিএল হিসেবে জানি। আবার এটিকে এই দেশের পেশাদার টুয়েন্টি ২০ ক্রিকেট লিগ বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রথম বিপিএল আয়োজন করেছিল ২০১২ সালে। বিপিএল-এর প্রথম আসর শুরু ২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। আর এই টুর্নামেন্টের প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস চ্যাম্পিয়ন হয়।

বিপিএল এর ইতিহাস

বিপিএল সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে উপরের অংশে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। এবার আমরা বিপিএল এর কিছু ইতিহাস জেনে নিব। মূলত ২০১২ সালে বিপিএল এর প্রথম আসল অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আসরে সাধারনত মোট ৬টি টিম অংশগ্রহণ করে যথা:

  • ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস,
  • খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস,
  • বরিশাল বার্নার্স,
  • চট্টগ্রাম কিংস,
  • রাজশাহী কিংস, এবং
  • সিলেট রয়্যালস।

বিপিএল প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস শিরোপা জয় করে। এক নজরে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন তালিকাঃ

  • ২০১২ (১ম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস
  • ২০১৩ (২য় আসর) চ্যাম্পিয়ন দলঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস
  • ২০১৫-১৬ (তৃতীয় আসর) চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
  • ২০১৬-১৭ (চতুর্থ আসর) চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা ডায়নামাইটস
  • ২০১৭-১৮ (পঞ্চম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল রংপুর রাইডার্স
  • ২০১৮-১৯ (৬ষ্ঠ আসর) চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
  • ২০১৯-২০ (৭ম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল রাজশাহী রয়্যালস
  • ২০২২ (৮ম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
  • ২০২৩ (৯ম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
  • ২০২৪ (৯ম আসর) চ্যাম্পিয়ন দল ফরচুন বরিশাল

তবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স এবং খুলনা টাইগার্স ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছালেও চ্যাম্পিয়ন হতে সক্ষম হয়নি। বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছে এবং প্রতিবছর এটি বাংলাদেশ ও বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।

তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বিপিএল এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, বাংলাদেশে বিপিএল খেলা জনপ্রিয় কেন তা জনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশে বিপিএল খেলা জনপ্রিয় কেন

ক্রিকেট দুনিয়ায় খেলুড়ে দেশগুলো বিশ ওভারের জনপ্রিয়তা দেখে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যার শুরুটা করেছিল মূলত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। আর ধীরে ধীরে এই টুর্নামেন্ট এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে।

📌আরো পড়ুন 👇

যার ধারায় পাকিস্তানে আয়োজিত হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল), শ্রীলংকায় শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এসএলপিএল), ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল)।

আইপিএলের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে বাকি দেশগুলোও বিশ ওভার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারই ধারাই একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করার পরিকল্পনা করতে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।

যে পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে আজকের বিপিএল। মূলত ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আমাদের এই দেশে বিপিএল এর প্রথম আসর হিসেবে মাঠ গড়ায়। সেই আসরেই একঝাক বিদেশী ক্রিকেটারদের দেখা মেলে। কুমার সাঙ্গাকারা থেকে শুরু করে ক্রিস গেইল এর মতো গ্রেট ক্রিকেটাররা সেই আসরে মাঠ মাতিয়েছিলেন।।

তবে এর পর বিপিএল কিছু ফিক্সিং কেলেঙ্কারি এবং আর্থিক অনিয়ম এর মুখোমুখি হয়, যার ফলে ২০১৪ সালের তৃতীয় আসর বাতিল করা হয়। ২০১৫ সালে ফিক্সিং এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে বিপিএল পুনরায় শুরু হয়। তখন সেই আসর থেকে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং নিয়ম কানুন যোগ করা হয়।

২০১৬ থেকে ২০১৯ এই সালের সময়ে বিপিএলকে আগের চেয়ে অনেক বড় আকারে অনুষ্ঠিত হয় এবং এর জনপ্রিয়তা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পায়। তবে করোনা ভাইরাস কালীন সময়ে মহামারীর কারণে ২০২০ সালে বিপিএলের সিজনটি অনেকটা ব্যাহত হয়েছিল। ২০২১ – ২২ মৌসুমে বিপিএল আসর আবারও ফিরিয়ে আনা হয়, যদিও সেই সময় দর্শকের অংশগ্রহণ ছিল খুবই সামান্য।

তারপর ২০২৩-২০২৪ আসরে বিপিএল টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল। মূলত মাঝের দিকে বিপিএল এর জনপ্রিয়তা কিছুতা কম ছিল এই করোনা মহারির কারণে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তা আগের মতোই অনেক বেশি বেড়েছে।

আমরা আশা করছি আগামী আসরেও এর জনপ্রিয়তা আরও বেশি হবে। তো আশা করছি বাংলাদেশে বিপিএল খেলা জনপ্রিয় কেন তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার

সেই ২০১২ সালে বিপিএল এর ১ম আসর শুরু হয়েছিল এইবার দেখতে দেখতে ২০২৫ সালে একাদশ আসর অনুষ্ঠিত হবে। এখনকার সময়ে স্বচ্ছতা এবং আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এখন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয় ।

📌আরো পড়ুন 👇

বিপিএল সেদিক দিয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিল। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) উন্নত সব ক্রিকেটীয় টেকনোলজি বদ্ধপরিকর বিপিএলের দশম আসরে নিশ্চিত করেছিল। তাহলে চলুন দশম আসরের মতো একাদশ আসরে বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক

১. স্নিকোমিটার

স্নিকোমিটার হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি যা শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে নিশ্চিত করে বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ করেছে কি না।স্নিকোমিটার ডিভাইসটি রাখা হয় উইকেটের মাঝে।

দর্শকদের চিৎকার থেকে শুরু করে, ব্যাটসম্যানের ফুট মুভমেন্ট, বাতাস প্রভূতি গুলো দূরীভূত করে ডিভাইসটিতে অ্যাম্পলিফিকেশন করার জন্য ব্যবহার করা হয় যাতে খুব সহজেইমাঠে বিভিন্ন যে শব্দ সঠিক শব্দতরঙ্গ হিসেবে নিশ্চিত করা যায়।

আর এই শব্দতরঙ্গ মাইক্রোফোন এর সহায়তায় আদান প্রদান বা ট্রান্সফার করা হয় অসিলিস্কোপে। আর অসিলিস্কোপ নিয়ে হয়ত আপনাদের জানা নেই। এই বিষয়েও আমরা নিচের অংশে আলোকপাত করেছি। আসুন তাহলে অসিলোস্কোপ কি বা এর কাজ কি তা জেনে নেই।

২. অসিলোস্কোপ

অসিলিস্কোপের সাহায্যে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালগুলোকে গ্রাফিক্যালি দেখানো হয় এবং টিভি আম্পায়ার স্নিকোমিটারের সাহায্যে ডিশিসন নেওয়ার সময় আমরা টিভিস্ক্রিনে যে শব্দতরঙ্গের গ্রাফ দেখি সেটি হচ্ছে অসিলিস্কোপ থেকে সরবরাহ করা হয়। থার্ড আম্পায়ার ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বা শরীরের স্পর্শ করেছে তখনই নিশ্চিত হয় যখন গ্রাফে কোন স্পাইক দেখা যায়।

৩. হটস্পট

অনেক ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বল ব্যাটে লেগেছে নাকি প্যাড বা গ্লাভসে লেগেছে সেটা নিয়ে ঢের বিতর্ক সৃষ্টি হয়! এ বিতর্ক সমস্যা সমাধান করার জন্য ব্যবহার করা হয় হটস্পট প্রযুক্তি। এর কাজ হচ্ছে মূলত ইনফ্রা-রেড শক্তিশালী রশ্মি দিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা করে। এর সঠিক ব্যবহার করার জন্য মাঠের দুই প্রান্তে দুটি শক্তিশালী থার্মাল-ইমেজিং ক্যামেরা থাকে।

বলের সঙ্গে যে কোনো বস্তুর (ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস বা খেলোয়াড়ের শরীর) ঘর্ষণের মুহূর্তে উৎপন্ন তাপ দূর থেকে দ্রুত পরিমাপ করতে পারে ক্যামেরা দুটি। এরপর বলের ঘর্ষণ বস্তুটির যে অংশে লাগে সেই অংশকে কম্পিউটার মাধ্যমে নেগেটিভ স্থানটি ছবিতে লাল দাগে চিহ্নিত হয়ে যায়।

৪. স্পিড গান

বোলাররা বল করার পরই টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে বলের গতি। বোলার ঘণ্টায় কত মাইল বা কিলোমিটার বেগে বল করলেন, সেটির ওপর বিশেষ নজর থাকে সবার। বলের এ গতি মাপা হয় ‘স্পিড গান’ প্রযুক্তির মাধ্যমে।যন্ত্রটি বসানো হয় সাইট স্ক্রিনের বেশ ওপরে। এটি গতি মাপে রাডার-বিমের সংকেতের সাহায্যে। বল পিচ করার পর পুরো লেংথ শনাক্ত করে এটি।

৫. হক আই প্রযুক্তি

হক আই এর ক্যামেরার সেন্সর সংগ্রহ করা ছবি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি মেশিনে পাঠায় এবং এটি বলেরত্রিমাত্রিক ছবি তৈরী করে। হক আই এর সিদ্ধান্ত খুবই সঠিক ও নিখুঁত।হক আইয়ে ব্যবহার করা হয় ক্রিকেট মাঠে অবস্থিত ছয়টি বা তার অধিক সংযুক্ত টিভি ক্যামেরা।

কম্পিউটার রিয়েল টাইম ভিডিও গ্রহন করে এবং ছয়টি ক্যামেরার সাহায্যে বলের বিভিন্ন দিক ও কোণ নির্ণয় করে। কম্পিউটার একই সাথে ছয়টি এঙ্গেলে তোলা ছবি একত্রিত করে এবং একটি ত্রিমাত্রক ছবি তৈরী করে। এই ত্রিমাত্রিক ছবিই বলের নির্দিষ্ট দিক প্রকাশ করে।

বাংলাদেশে বিপিএল সম্পর্কে লেখকের মতামত

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এখন পর্যন্ত ৯টি মৌসুম দেখা গেছে এবং সেগুলো অসাধারণভাবে ভালো ছিল। এই ধরনের টুর্নামেন্ট শুধুমাত্র দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্যই নয়, দেশের কল্যাণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টের ১১ তম সংস্করণ ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিপিএলে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাংলাদেশে বিপিএল সম্পর্কে বিভিন্ন জরুরি তথ্যগুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা এতক্ষণে উপরোক্ত বিষয়ে একটি ধারনা পেয়ে গেছেন। এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়মিত পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করেতে পারেন ধন্যবাদ।

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment